কাক পরীর রূপকথা (অন্তিম পর্ব) - তুরস্ক রূপকথা - (অনুবাদ : মিথিল ভট্টাচার্য্য)

কাকপরীর রূপকথা
তুরস্কের রূপকথা
অনুবাদ - মিথিল ভট্টাচার্য্য



(অন্তিম পর্ব)

অল্প দিন গেল না অনেক দিন!
কে জানে, এমিল শুধু আপন মনে ময়ূরপঙ্খী নাওয়ের দাঁড় টানে, আর খোলা পালে হাওয়া লেগে নাও সমুদ্রের বুকে তরতর করে এগিয়ে চলে।
অবশেষে সাত সাগর আর তেরো নদী পেরিয়ে নাও এসে ঠেকল সেই নারিকেল ঘেরা দ্বীপে। 
দ্বীপের তীরে নোঙ্গর ফেলে এমিল একটু বিশ্রাম নিল। কাক এতক্ষন ময়ূরপঙ্খীর মাস্তুলেই বসে ছিল, হঠাৎ বলে উঠল “আমাদের সৌভাগ্য এমিল আজকেই পূর্ণিমা। একটু পরেই পরীরা নেমে আসবে দ্বীপের বুকে। কিন্তু এবার বাকি সব কাজ তোমাকে একাই করত হবে। আমি পালাই”
এমিল ব্যাকুল স্বরে বলে উঠল “কিন্তু তুমি কোথায় উড়ে যাচ্ছ। তুমি থাকলে আমি মনে ভরসা পাই।“
- না এমিল, আমি থাকলে বরং তোমার অসুবিধে বাড়তে পারে, তাঁর থেকে আমি পালাই। চিন্তা করো না, আমি সব সময় তোমার উপর নজর রাখব। দরকারে আবার ঠিক উড়ে আসব তোমার কাছে।
এই বলে কাক হঠাৎ উড়ে হারিয়ে গেল নীল আকাশের বুকে।
আর এমিল রইল পরীদের অপেক্ষায়।
একটু পরেই সূয্যি অস্ত গিয়ে পূর্নিমার রূপালী চাঁদ জেগে উঠল আকাশের বুকে, আর তারপরেই আচমকা এমিলের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে হঠাৎ রামধনুর গা বেয়ে একদল ভারী সুন্দরী মেয়ে নেমে এলো দ্বীপের বুকে। মোমের পুতুলের মতন নিখুঁত তাদের গড়ন, গোলাপী আলো দিয়ে যেন তারা গড়া, মাকড়সার জালের মতন সূক্ষ্ম পোষাক পরনে। আর তাদের প্রত্যেকের পিঠে প্রজাপতির মতন একজোড়া ভারি সুন্দর ডানা।
একে অপরের সাথে হাত ধরাধরি করে নিজের মনে তারা গান গাইছে, আপন মনে নাচছে। কেউ ফুল কুড়োচ্ছে, কেউ বা জলে নেমে মনের আশ মিটিয়ে সাঁতার কাটছে। শুধু একটি মেয়ের যেন কোন কিছুতেই মন নেই। সে নিজের মত এক কোনে কালো মুখ করে বসে আছে।
হঠাৎ তাদের একজনের নজর পড়ল নৌকার দিকে, মুহূর্তের মধ্যে তারা সবাই দল বেঁধে ভীড় করল নৌকার কাছে। গম্ভীর মেয়েটিই ভারী স্বরে বলে উঠল
- কে তুমি ? কী চাও ? কেন এসেছ এই দ্বীপে ?”
এমিল বিনীত স্বরে বলে উঠল “আমি সওদাগর, দেশে দেশে খেলনা বিক্রী করে বেড়াই। ঝড়ের ভয়ে এই দ্বীপে নোঙ্গর ফেলতে বাধ্য হয়েছি । আমায় মাপ করুন, আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই।“
খেলনার নাম শুনে অন্য এক পরী বলে উঠল “কত খেলনা আছে তোমার কাছে ?”
- তা এক নৌকা ভর্তি। খেলনারই তো ব্যবসা আমার। ঐ বেচেই তো পেট চালাই।
পরী সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে “আমাদের দেখাতে পারবে তোমার খেলনা, আমরা খুশী হলে তোমাকে বর দিয়ে বড়লোক করে দেব।“
এমিল বিনীত স্বরে বলে উঠল “সে তো আমার সৌভাগ্য, কিন্তু আমার নৌকা ছোট সবাই এক সাথে এলে নৌকা ডুবে যেতে পারে। তাঁর চেয়ে আপনারা বরং এক এক করে আসুন। যিনি আপনাদের প্রধান তিনিই আগে আসুন।“
পরীটি সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে “তাহলে রাজকুমারী জেইনিপই আগে যান, তিনিই আমাদের প্রধান। দেখো তোমার খেলনা যদি তাঁর মন একটু ভাল করে দিতে পারে!”
গম্ভীর মুখের বিষন্ন চেহারার পরীটি আগে এগিয়ে আসে, “কই দেখাও তোমার খেলনা।“
পুতুল দেখার জন্য রাজকন্যা জেইনিপ নৌকায় একাই উঠলেন, নৌকায় সারিসারি পুতুল, এমিল রাজকন্যা জেইনিপকে সেই পুতুল দেখাতে শুরু করল।
হাজার হাজার পুতুল দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়, বাকি পরীরা কিছু সময় অপেক্ষা করে তারপর আবার নিজেদের নিজেদের খেলায় ফিরে যায়।
আর রাজকন্যা জেইনিপ অবাক হয়ে শুধু দেখে যায় সেই রকমারি পুতুলের সারি।
আর সবার অজান্তে চুপি চুপি গিয়ে এমিল নৌকার নোঙ্গর তুলে দেয়। দখিনা বাতাস পেয়ে নৌকা উল্কার বেগে সমুদ্রের গা বেয়ে তরতর করে এগিয়ে যায়।
এদিকে সব পুতুল দেখা শেষ করে রাজকন্যা বেরিয়ে আসেন।
কিন্তু ওমা, কোথায় সেই দ্বীপ! নৌকা যে মাঝ সমুদ্রের মাঝে , নীল জল বেয়ে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে অকূল সমুদ্রে।
ভয় পেয়ে রাজকন্যা জেইনিপ বলে উঠল “কে তুমি ? আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? শিগগির বলো নইলে অভিশাপ দিয়ে এখনই তোমায় ছাই করে দেব।“
এমিল নত মুখে বলে উঠল “আমায় ক্ষমা করবেন রাজকুমারী, কিন্তু এছাড়া আপনাকে অভিশাপ মুক্ত করে নিয়ে যাওয়ার আর কোন উপায় ছিলনা আমাদের রাজামশাইয়ের কাছে।“ 
- তোমাকে অভিশাপের কথা কে জানালো ? কে তুমি ? কার কাছে নিয়ে যাচ্ছ আমাকে ?”
- আমি এক সামান্য ব্যাধের ছেলে রাজকুমারী, আমার নাম এমিল। আমি আমাদের রাজা বেসিমের কাছে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি।
এবার সব ভয় চিন্তা মুছে গিয়ে এক ভারি মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে রাজকন্যা জেইনিপের মুখে “তুমি বেসিমের কাছে আমায় নিয়ে যাচ্ছ? তাড়াতাড়ি তাহলে নৌকা চালাও। আমি আমার বেসিমের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌছতে চাই। আজ তুমি তোমার বুদ্ধি দিয়ে সব অভিশাপ ভেঙে আমায় মুক্ত করে নিয়ে যাচ্ছ আমার ভালবাসার কাছে। কথা দিলাম একদিন এর প্রতিদান তোমায় আমি নিশ্চয়ই দেব।“
সাত দিন সাত রাত পেরিয়ে গেল, সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে ময়ূরপঙ্খী নাও আবার এসে ঠেকল রাজপ্রাসাদের ঘাটে।
রাজকন্যা জেইনিপকে নিয়ে এমিল এসে পৌছাল রাজা বেসিমের দরবারে। মহারাজ বেসিম যেন নিজের দুই চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন না !
তার জেইনিপ এতদিন পর সত্যিই আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে!
এ কী কোন স্বপ্ন!
রাজার দুচোখ বেয়ে জল ঝরতে থাকে। ছুটে এসে তিনি রাজকন্যার নরম হাত দুটো তুলে নেন নিজের হাত।
-আর কোনদিন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো জেইনিপ?“
নীরবে রাজা বেসিমের হাতদুটো শুধু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাজকন্যা জেইনিপ! 
তারপর এক শুভদিন দেখে রাজা বেসিম আর রাজকন্যা জেইনিপের বিয়ে হয়ে যায়, রাজকন্যা জেইনিপ হয় দেশের রাণী।
আর নিজের পুরোন মালিককে দেখে রাজার ময়ূরও আনন্দে ডাকতে শুরু করে দেয়, গজদন্তের দাঁড়ের উপর দাঁড়িয়ে তার সেকী নাচ! 
রাজা বেসিম তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের গলার দুর্মূল্য মণি মুক্তোর হার উপহার দিয়ে বসলেন এমিলকে। 
পুরষ্কার দিলেন রাজ্যের এক বিশাল জমিদারী! 
সারা রাজ্য জুড়ে আনন্দের হাট বসে গেল।
কিন্তু খালি মুখ ব্যাজার হয়ে গেল মন্ত্রী বুলুতের।
একে তো এই দুদিনের ব্যাধের ছোঁড়া রাজার আরো কাছের মানুষ বনে গেল, তার উপর রাজার মনের দুঃখ এবার কেটে যাচ্ছ, এবার তিনি রাজকার্যে আবার মন দেবেন। আর তার মানে মন্ত্রীর সব অন্যায়ের পর্দা ফাঁস!
আবার তায় নতুন রাণীর চোখ রাঙানি!
রাজা বেসিম যতটা সরল, নতুন রাণী ঠিক ততটাই চৌখস, সব দিকে তাঁর নজর। তিনি থাকতে আর কারোর ক্ষতি করার সাহস নেই বুলুতের। 
মনের জ্বালায় দিন রাত জ্বলতে থাকল বুলুত।
আর কিছু করতে না পেরে শেষমেষ সে গোপনে রাণীর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিল।
এই নতুন রাজ্যে নতুন আবহাওয়ায় রাণী এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন, এখানে সমুদ্রের হাওয়া নেই, ফুলের বাগান হয়ত আছে কিন্তু প্রজাপতির ঝাঁক নেই। নরম বালির উপর ছুটে বেড়ানোর মতন সুন্দর খোলা প্রান্তর নেই।
তাঁর শরীর দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল, এবার এই বিষে তিনি সত্যি সত্যি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়লেন।
রাজা বেসিম সাত তাড়াতাড়ি রাজবৈদ্য ডাকলেন, তিনি এসে ওষুধ দিলেন,পাঁচন দিলেন। 
তাতে বিষের উপশম তো হল, কিন্তু রাণীর দুর্বলতা কিছুতেই কমল না।
রাণী শেষমেষ বললেন “এবার আমাকে মৃত্যুর দেশে চলে যেতে হবে মহারাজ। এই রোগ আপনার দেশের ওষুধে কিছুতেই কমবে না। আমাকে বিদায় দিন।“
রাজার চোখ ফেটে জল পড়তে লাগল, কাঁপা স্বরে তিনি বলে উঠলেন “কিছুতেই নয় রাণী, কোন না কোন ওষুধ এর নিশ্চয়ই আছে। আমি ঠিক খুঁজে বার করব। কিন্তু তুমি কিছুতেই আমাকে আবার ছেড়ে যেতে পার না।“
রাণী অল্প হেসে বলে উঠল “এর একমাত্র ওষুধ আছে আমার দেশে মহারাজ, কিন্তু সেখান থেকে কে ওষুধ আনবে?”
এমিল রাজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, সে বলে উঠল “আমি আনব রাণীমা, আপনাকে শাপমুক্ত করে আমিই নিয়ে এসেছিলাম। আবার আপনার জন্য ওষুধও আমিই নিয়ে আসব। মহারাজ আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি রাণীমার কোন ক্ষতি হতে দেবনা।“
এই বলেই এমিল আবার তাঁর ময়ূরপঙ্খী নাও সাজিয়ে ভেসে পড়ল সমুদ্রের বুকে, সাত দিন সাত রাত পর পূর্নিমার রাত্রে তার নৌকা আবার এসে ঠেকল সেই ছোট্ট দ্বীপের বুকে।
কিন্তু একি দুটো প্রকাণ্ড সিংহ এবার বসে আছে দ্বীপের মুখে, সে দ্বীপের বুকে এক পা রাখলেই এরা যে তাঁর ঘাড়ে ভেঙে খাবে! 
মুখ শুকনো করে নৌকায় বসে এমিল ভাবছে কী করবে! এমন সময় সেই কাক আবার কোথা থেকে উড়ে এল তাঁর নৌকায়।
- কি গো এমিল, এত ভাবছ কী ?আর আমাকে না জানিয়ে আবার এই দ্বীপে কী মনে করে ?
- কি করি বলো? রাণীমার অসুখ, মহারাজ দুঃখে ভেঙে পড়েছেন। তাই তাড়াহুড়োতে তোমাকে জানানোর আর সময় পেলাম না। সাত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম নৌকা নিয়ে। কিন্তু এখন কি করি বলো, এই দুটো সিংহ বসে আছে । নামলেই তো আমার ঘাড় ভেঙে খাবে। একটা কোন উপায় দাও তো! 
- চিন্তা করোনা, আমার পালকটা হাতে নাও। এটা দেখলে ওরা আর কিচ্ছুটি বলবেনা , বরং ওরাই সরে গিয়ে তোমায় পথ করে দেবে।
কাক এমিলকে নিজের একটা পালক তুলে দিল, সেই পালক হাতে নিয়ে এমিল নামল দ্বীপের বুকে।
অবাক কাণ্ড সত্যি পালক দেখে সিংহ দুটো আর কিছুই বললো না। এমিল ওদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল দ্বীপের ভেতরে, আজকেও আগের মতই পরীরা খেলা করছিল দ্বীপের মাঝে।
এমিলকে দেখা মাত্রই তারা দল বেঁধে ছুটে এল তার কাছে “তুমি আবার? তুমিই তো আমাদের রাজকন্যাকে নিয়ে গেছিলে, ফিরিয়ে দাও তাকে “
-তাকে যে আমি তার ভালবাসার রাজা বেসিমের কাছেই নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনব কীভাবে? তাঁর যে শরীর বড় খারাপ, তোমাদের এই দেশের ওষুধ না পেলে তিনি যে আর প্রাণে বাঁচবেন না। “
পরীরা সঙ্গে সঙ্গে তড়িঘড়ি করে ছুটলো ওষুধ আনতে। নানান ফুল লতা পাতা এনে বলল “এই নাও ওষুধ, গোলাপ জলে ভিজিয়ে পদ্ম মধু দিয়ে খেতে বলো তাহলেই তিনি আবার সুস্থ হয়ে যাবেন। আর তাকে বলো তিনি সুখে থাকলেই আমরাও সুখী। শুধু তুমি মাঝে মাঝে এসে তাঁর খবর দিয়ে যেয়ো আমাদের, আমরা তাতেই সুখী।“  
এমিল হাসিমুখে তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ দিয়ে নৌকায় এসে বসল, সাতদিন সাত রাত পর আবার নৌকা এসে পৌছাল তাঁর নিজের দেশে।
ছুটতে ছুটতে সে যখন রাজবাড়ীতে গিয়ে পৌছাল, রাণী তখন বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। রাজবৈদ্য তাড়াতাড়ি এমিলের হাত থেকে ওষুধ নিয়ে গোলাপ জলে ভিজিয়ে পদ্ম মধু দিয়ে রাণীকে খাওয়ালেন। 
আস্তে আস্তে রাণীর শরীরে যেন সাড় ফিরে এলো!
কিছুক্ষন পরেই তিনি চোখ মেললেন। 
রাজবৈদ্যের মুখে হাসি ফুটলো, “আর ভয় নেই, রাণীমা এবার সুস্থ হয়ে উঠবেন।“
রাজার মুখ থেকে অবশেষে দুঃখের কালো মেঘ কাটল।
রাণী ক্লান্ত মুখে রাজার দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে উঠলেন।
এমন সময় হঠাৎ তাঁর নজর পড়ল এমিলের দিকে, কাক তখন এমিলের কাঁধে বসা।
কাককে দেখেই রাণী জেইনিপ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে উঠলেন “তুই হতচ্ছাড়ী এখানে আবার কি করতে এসেছিস ? তোর এত সাহস তুই আবার আমার ঘরে এসে ঢুকেছিস ?”
কাক বলে উঠল “আমি ছিলাম বলেই তো তুমি আবার তোমার ভালবাসাকে ফিরে পেয়েছ, আমিই তো তোমাকে কত ফন্দী করে রাজা মশাইয়ের কাছে এনে দিয়েছি। তোমার ওষুধও তো এমিলকে দিয়ে আমিই নিয়ে আসলাম।“
- তুই এত সব কিছু করেছিস? ঠিক আছে যা আমি তোকে এবার তাহলে ক্ষমা করে দিলাম।“
বলার সাথে সাথেই অবাক কাণ্ড।
কালো কাকটি মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল এক অপূর্ব সুন্দরী পরীতে।
রাজা অবাক হয়ে বলে উঠলেন “একী কাণ্ড?”
রাণী হেসে বলে উঠলেন “ও আমার ছোটবেলার বন্ধু। সারাদিন সবার সাথে ঝগড়া করে বেড়াত,একদিন আমার সাথে ঝগড়া করে আপনার পরীরাজ্যে লুকিয়ে থাকার কথাটা ওই মুখ ফস্কে আবার বাবাকে বলে ফেলেছিল। তাই রাগের মাথায় আমি ওকে অভিশাপ দিয়ে কাক করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এটাই ওর আসল মূর্তি, ও হল পরী এলিফ। আমার প্রিয়তম বন্ধু।“
রাজা হেসে বললেন “বেশ, ও তাহলে তোমার সখী হয়ে এই প্রাসাদেই থেকে যাক।“
রাণী মুখ টিপে হেসে বলল “আমি ওর বিয়ে ঠিক করেছি, আমি ওর বিয়ে দেব এমিলের সাথে। ওদের দুটিকে বড় সুন্দর মানাবে। আর আপনি এমিলকেই আজ থেকে আপনার মন্ত্রী করুন। আপনার বুড়ো মন্ত্রী বড় হিংসুটে, সে কারোর ভাল দেখতে পারে না। আপনার উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে এতদিন প্রজাদের উপর সে অনেক অত্যাচার করেছে, এমনকি আমাকে বিষও সেই খাইয়েছিল। আপনি ওকে কারাগারে বন্দী করুন।“
ব্যস সাথে সাথে মহারাজের আদেশে সৈন্যরা বুড়ো হিংসুটে মন্ত্রী বুলুতকে বন্দী করে সারা জীবনের মতন পাঠিয়ে দিলেন কারাগারে।
আর এমিল হল রাজ্যের নতুন মন্ত্রী, আর এক শুভদিন দেখে তাঁর সাথে কাকপরী এলিফের বিয়ে হয়ে গেল।
রাজা রাণী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের বিয়ে দিলেন। এমিলের আর কোন দুঃখ রইলনা, মহানন্দে তাদের জীবন কাটতে লাগল।
কিন্তু এত কিছুর পরেও এমিল কিন্তু তাঁর বাবার সেই পাখি ধরার ফাঁদটা কোনদিনও ফেলে দেয়নি।
বড় যত্নে সে তার বাবার শেষ উপহারটুকু রেখে দিয়েছিল তাঁর কাছে।
ওর জন্যই তো আজ তার এত সম্মান।
(সমাপ্ত)

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.