মানুষ খেকো পিশাচিনী - পর্ব ৪ - ভৌতিক গল্প/গোয়েন্দা কাহিনী/রহস্য

মানুষ খেকো পিশাচিনী
মাসুদ রানা
পর্ব :


মিসির আলি সাহেব হয়তো ভয়ংকর কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলেন ! তাই তিনি দ্রুত ছুটে শম্মীর ঘরের দিকে গেলেন। আবির সাহেবও তার পিছু পিছু ছুটে শম্মীর ঘরে ঢুকলেন। শম্মীর ঘরে গিয়ে তারা দুঁজনেই পুরো অবাক হয়ে গেলেন। আবির সাহেবতো বেশ আৎকেই উঠলেন। কারণ পুরো ঘরের কোথাও শম্মী নেই! এরপর পুরো বাড়ি খুজেও আবির সাহেব আর মিসির আলি সাহেব কোথাও শম্মীকে পেলো না! এরপর তারা ছাদে গেলো। কিন্তু দেখলো ছাদেও শম্মী নেই ! এইদিকে বাড়ির গেটও তালা দেওয়া। তাহলে শম্মী মুহুর্তের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেলো? আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেব দুজনেই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন!
.
পুরো বাড়িতে শম্মী নেই ? তাহলে শম্মী এতো রাতে গেলো টা কোথায়? মিসির আলি সাহেব ইবা দেয়াল বেয়ে কার নীচে নামার শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন? একটা ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে কী করে দেয়াল বেয়ে নামতে পারে? যদিও এটা শম্মীর জন্য অসম্ভব কিছু না। কারণ শম্মী আর ৮-১০ টা মেয়ের মতো স্বাভাবিক না! সে এটা করতেই পারে!মেয়েটার হিংস্রতার কাছে যেকোন কিছুই হার মানবে। এরপর মিসির আলি সাহেব আবির সাহেবের দিকে কিছটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন:
-আপনি আবার আমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়েছেন?
-ইয়ে মানে! হ্যাঁ । কথাটা আসলে আমি আপনাকে বলতে চাইনি। গতকাল আপনার বাড়িতে যাওয়ার আগে আমি ভালো করেই আমার বাড়ির গেটটা আটকে রেখে গিয়েছিলাম। আমি সবসময়ই বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে এইভাবে শম্মীকে ঘরে রেখে বাহির থেকে গেট আটকে যাই। যাতে করে শম্মী একা একা বাড়ি থেকে বের হতে না পারে। কিন্তু গতকাল আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনার সাথে দেখা করে যখন আমি আবার আমার বাড়িতে ফিরে আসলাম তখন এর ব্যতিক্রম কিছু দেখলাম! আমার ঘরের সামনে গিয়ে যেই তালাটা খুলতে যাবো, হঠাৎ দেখলাম দরজায় কোন তালা নেই! আর গেটটা হালকা করে ভেতর থেকে খোলা! এরপর বেশ অবাক হয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম ,শম্মী ঘরের ভেতরে একটা বাচ্চা মেয়েকে ছিড়েছিড়ে খাচ্ছে। আসলে এই কথাটাও আপনাকে বলা হয়নি যে, শম্মী বেশ কিছুদিন ধরে মানুষের মাংস আর রক্ত খাওয়ার জেদ করছিলো। তাই এখন তার হিংস্রতার পর্যায় অনেক বেড়ে গেছে!!
সে এখন মানুষ শিকার করতে চায়!
.
.
এতটুকু কথা শোনার পরেই মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে শম্মী এবার কী করতে চলেছে!
একটু আগে তাহলে শম্মীই দেয়াল বেয়ে নীচে নেমেছিলো!
.
এরপর আবির সাহেব আর মিসির আলি সাহেব দুজনেই দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় গেলেন!! এরপর দুজনে মিলে এ রাস্তা থেকে ও রাস্তা পুরোটাই শম্মীকে খুঁজে বেড়ালেন। কিন্তু পুরো এলাকাটা ঘুরেও কোথাও তারা শম্মীকে খুজে পেলো না । আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেব দুজনেই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এরপর মিসির আলি সাহেব লক্ষ করলেন যে, রাস্তার একপাশে একটা বৃদ্ধ লোক বসে বসে কান্না করছেন। মিসির আলি সাহেব এবং আবির সাহেব দুজনেই দ্রুত লোকটার কাছে গিয়ে কান্নার কারণ জানতে চাইলে লোকটা বলেন যে , সে নাকি তার ৭ মাস বয়সের নাতিকে নিয়ে সন্ধ্যার পর একটু রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিলেন । এরপর হঠাৎ অনেকটা বানর আকৃতির একটা বাচ্চা মেয়ে তাকে আক্রমন করে তার নাতিটাকে তার কাছ থেকে কেরে নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এখান থেকে পালিয়ে যায়! কিন্তু কেউ তার এই অদ্ভুত কথাটা বিশ্বাস করছে না এবং তার নাতিকেও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
তাই সে বসে বসে কাঁদছে!
.
বৃদ্ধ লোকটার এই কথা শুনে আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেবের আর কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না। তারা যেনো খুব সহজেই বুঝতে পারলেন যে, এই বৃদ্ধ লোকটার নাতি আর শম্মী এখন কোথায় রয়েছে! এতক্ষনে শম্মী হয়তো তার শিকার নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেছে! এরপর আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেবকে দুজনেই দ্রুত আবার বাড়িতে ফিরে গেলেন!
.
তারা বাড়িতে পৌছেই দেখলো যে ,বাড়ির গেটটা হালকা করে ভেতর থেকে খোলা রয়েছে। যদিও বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে আবির সাহেব ভালো করেই বাড়ির আটকে গিয়েছিলো। এ বার যেনো তাদের ভয় আরো বেড়ে গেলো! তাদের সন্দেহ যেনো এবার বাস্তবে রূপ নেওয়া শুরু করলো! মিসির আলি সাহেব এবং আবির সাহেবের যেনো আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না! এরপর তারা দ্রুত ঘরে ঢুকলো । এরপর তারা যা ভেবেছিলো তাই হলো!
.
দেখলো, একটা ছোট শিশুর মাথাহীন শরীর মেঝেতে পড়ে রয়েছে! আর শম্মী তার শরীরটা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেব উভয়েই অবাক দৃষ্টিতে শম্মীর দিকে তাকিয়ে রইলো। শম্মী এবারো বাচ্চাটার শুধু রক্ত,মগজ আর হৃদপিন্ড খেলো। এরপর বাকি শরীরটা মেঝেতে ফেলে রেখেই শম্মী বললো:
-আমি আর খাবো না। তোমরা একে বাহিরে ফেলে দিয়ে আসো! আমি এখন ঘুমাবো।
.
এতটুকু কথা বলেই শম্মী তার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো! মিসির আলি সাহেব এতক্ষণ ধরে নির্বাক হয়ে শুধু শম্মীর হিংস্রতা আর পৈশাচিকতা দেখছিলো! আবির সাহেব যেনো ঘটনাটাতে অব্যস্থ! এরপর গতদিনের মতো আজো আবির সাহেব বাড়ির পেছনে একটা গর্ত করে বাচ্চা শিশুটার লাশটা পুতে রাখলো। মিসির আলি সাহেব নিজের চোখেই দৃশ্যটা দেখলেন! কিন্তু তার কিছুই বলার ছিলো না!
.
এরপর আবির সাহেব আর মিসির আলি সাহেব যার যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। যদিও তারা সারা রাতই জেগে কাটালেন। আবির সাহেব মোটামোটি এই ঘটনাতে অভ্যস্ত হলেও মিসির আলি সাহেব ঘটনাটা মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বসে বসে ভাবছিলেন, শম্মীর বর্তমান আচরণ অনেকটা বনের হিংস্র
প্রাণিদের মতো। তার এই আচরণের পেছনেতো একটা ব্যাখ্যা অবশ্যই আছে! ব্যাখ্যাটাতে অবশ্য রহস্য দিয়ে ভরা।
কিন্তু যে করেই হোক দ্রুত এই রহস্যটার সমাধান করতে হবে!
.
নির্ঘুম একটা রাত কাটায় মিসির আলি সাহেব! এরপর সকাল হতেই তিনি একবার শম্মীর ঘরে যায়! শম্মীর ঘরে যেয়ে দেখে শম্মী ঘরে নেই! এরপর হাঁটতে হাঁটতে ছাদে যায় মিসির আলি সাহেব । তিনি জানতেন শম্মী হয়তো সকালে ছাদেই থাকবে! এরপর মিসির আলি সাহেব ছাদে গিয়ে দেখেন , শম্মী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। শম্মীর এখনকার আচরণ একেবারেই স্বাভাবিক! গতদিনের সকালের আচরণের মতোই! এরপর মিসির আলি সাহেব শম্মীর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলেন:
-আচ্ছা শম্মী? গতকাল রাতে তুমি কী করেছিলে এটা কী তোমার মনে আছে?
-রাতে আবার কী করবো? সবাই যা করে তাই করেছি! ঘুমিয়েছি!
- আচ্ছা কালকে বিকেলের পর থেকে তুমি কী কী করেছিলে এটা কী তোমার মনে আছে?!
-ধুর বোকা! আমি কিছু করবো কী করে? আমি কী তখন জেগে থাকি নাকি? আমিতো দুপুর পর্যন্ত জেগে থাকি। এরপর চোখ দুটো লেগে আসে আর আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আর ঘুম ভাঙে সকালে। আর আমি সকালে আকাশ দেখি!
.
.
এবার যেনো মিসির আলি সাহেব শম্মীকে পুরোপুরি বুঝতে পারলেন। তার জটিল সমস্যাটার অনেকটাই ধারণা করতে পারলেন। শম্মীর শরীরটা দিনের অর্ধেকটা সময় তার নিজের আয়ত্তে থাকে। বাকি অর্ধেকটা সময় হিংস্র প্রাণির দখলে থাকে! তবে শম্মীর এইরকম অদ্ভুত হিংস্র আচরণের পেছনে যে রহস্যটা রয়েছে তার কিছুটা মিসির আলি সাহেব আন্দাজ করতে পারলেও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হলে তাকে আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে!
.
শম্মীর এই সমস্যাটার রহস্য শুধু জানলেই চলবে না। এর সমাধানও বের করতে হবে! নাহলে শম্মী ধীরে ধীরে আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠবে এবং আরো প্রাণ যাবে অনেকগুলো নিষ্পাপ শিশুর। শম্মীকে এই কাজে বাঁধা দিতে গেলেও উল্টো কিছু ঘটতে পারে! বিপদটা আবির সাহেবেরও হতে পারে !
.
তাই যত দ্রুত সম্ভব শম্মীর এই রকম সমস্যার পেছনের সঠিক রহস্যটা বের করতেই হবে। এর জন্য অবশ্য মিসির আলি সাহেবকে আগে এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে! বাড়ির রহস্যটুকু তার মোটামুটি জানা হয়ে গেছে ! এখন বাড়ির বাহিরের রহস্যটা জানা বাকি!
.
এরপর সকাল সকালই মিসির আলি সাহেব আবির সাহেবকে একটা জরুরী কাজ আছে বলে তার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। মিসির আলি সাহেব নিজের বাড়িতে গিয়েই এই ধরণের অদ্ভুত শিশু সম্পর্কে কোন বই আছে কিনা তা খুঁজতে থাকেন । কিন্তু এই রকম শিশুকে নিয়ে কোন বইই পাননি তিনি!
.
এরপর মিসির আলি সাহেব ভাবলেন, শম্মীর জন্মের সময় যে ডাক্তার তার মায়ের অপারেশন করে ছিলো তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে হবে। নিশ্চই সে ই আবির সাহেব এবং তার স্ত্রীর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাদের সাথে একটা ভয়ংকর গবেষণার পরীক্ষা চলিয়েছিলো! যার ফল আজ এই ভয়ংকর হিংস্র মেয়ে শম্মী! সেই ডাক্তারই তার গবেষণার বস্তু বানায় শম্মী এবং তার মা কে। তাই সে ভেকসিনের নাম করে তার গবেষণায় উৎপন্ন কোন মেডিসিন শম্মীর মায়ের শরীরে প্রয়োগ করে।
.
কিন্তু তার গবেষণার বিষয়টা কী ছিলো? সে কী কোন হিংস্র মানুষ তৈরি করতে চাইছিলো! কিন্তু কেন? এইসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিলো মিসির আলি সাহেবের মাথায়। এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে মিসির আলি সাহেবকে ৬ বছর আগে ফিরে যেতে হবে যখন শম্মীর জন্ম হয়। এবং তখন ডাক্তার ওয়াজেদ আলি কী নিয়ে গবেষণা করছিলো এটাও জানতে হবে!
.
এরপর মিসির আলি সাহেব প্রায় ৬ বছর আগের শম্মীর জন্মের
পরেরদিনের পত্রিকাগুলো অনেক কষ্টে একজনকে দিয়ে খুঁজিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। আবির সাহেবের কথাই ঠিক ছিলো। শম্মীর যেদিন জন্ম হয় সেদিনই একটা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এবং খবরটা পরের দিন প্রকাশিত হয় খবরের কাগজে! খবরের কাগজ গুলো পড়ে ডাক্তার ওয়াজেদ আলি অনেক কিছু সম্পর্কেই স্পষ্ট ধারণা পায় মিসির আলি সাহেব। খবরের কাগজে ওয়াজেদ আলির বাড়ি কোথায়, তিনি গবেষণা কোথায় করতেন, তিনি কী কী বিষয় নিয়ে গবেষণা করে সফল হয়েছেন, কী কী বিষয়ের উপর পুরষ্কার পেয়েছেন, তার বিশ্বস্ত সহযোগি কারা ছিলো, তার প্রিয় বন্ধু কারা ছিলো এসব কিছু সম্পর্কেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া ছিলো! যদিও মৃত্যুর আগের সময়টাতে ওয়াজেদ আলি কী নিয়ে গবেষণা করছিলেন এই বিষয়ে পত্রিকাতে কিছুই প্রকাশ পায়নি!
.
এরপর মিসির আলি সাহেব খবরের কাগজ থেকে ডাক্তার ওয়াজেদ আলির বিশ্বস্ত সহযোগিদের নাম দেখে তাদের ঠিকানা বা টেলিফোন নাম্বার বের করে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। যদিও অনেক জনকেই পায় না সে! শুধু অল্প কয়েক জনের সাথেই কথা বলার সুযোগ পান তিনি। তারা মিসির আলি সাহেবকে জানান, ডাক্তার ওয়াজেদ আলির শেষ গবেষণাটা ছিলো অনেকটা গোপন গবেষণা! সে স্বভাবতই যেকোন গবেষণা একা করতেন না। তার সহযোগিদের সাথে নিয়ে তিনি তার জীবনের প্রায় সবগুলো গবেষণাই করেন!
কিন্তু তিনি মৃত্যুর আগে যে গবেষণাটা করছিলেন সে গবেষণায় তিনি তার সাথে আর কাউকেই নেয়নি! তিনি একা একাই তার শেষ গবেষণাটা পরিচালনা করেন। তিনি তার নিয়মিত গবেষণা যে গবেষণাগারে করতেন এই গবেষণাটা সেখানেও করেন না। গবেষণাটি করেন ব্যাক্তিগত ভাবে তার নিজস্ব বাড়িতে। তাই তার কোন সহযোগিই জানেন না যে , মৃত্যুর পুর্বে ডাক্তার ওয়েজেদ আলি কী নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন।
.
কিন্তু মিসির আলি সাহেব ভালোমতই বুঝতে পারেন যে ডাক্তার ওয়াজেদ আলি তখন কী বিষয় নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তিনি বিভিন্ন হিংস্র প্রাণির জিনকে একটা গর্ভবতী মহিলার শরীরে প্রবেশ করাতে চাইছিলেন। তিনি চাইছিলেন সেই জিনটা রক্তের মাধ্যমে সেই গর্ভের শিশুটির শরীরে প্রবেশ করুক এবং এরপর অস্বাভাবিক ক্ষমতা সম্পন্ন একটা শিশুর জন্ম দিক। যে শিশুটা দেখতে মানুষের মতোই হবে কিন্তু তার ভেতর জঙ্গলের যে কোন হিংস্র প্রাণির বৈশিষ্ট থাকবে! সে যেমন হিংস্রতা প্রদর্শন করতে পারবে ঠিক তেমন ভাবে সেই সকল প্রাণিদের রুপও ধারণ করতে পারবে। যদিও তিনি গবেষণাটা পুরোপুরি শেষ করার আগেই মারা যান। মৃত্যুটা হয়তো কাকটালীয়! সে এই আবির সাহেবের বাচ্চা মেয়ের মাধ্যমেই তার এই অদ্ভুত গবেষণার প্রথম পরীক্ষাটি করেন ! তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো এইরকম আরো অনেক হিংস্র মানুষের সৃষ্টি করতে পারতেন।
.
মিসির আলি সাহেব ভাবতে থাকেন,
যেহেতু ডাক্তার ওয়াজেদ আলি একজন গবেষক। তাই হয়তো সে মৃত্যুর আগেই কোথাও না কোথাও তার এই অদ্ভুত গবেষণার নথিপত্র তৈরি করে রেখে গিয়েছেন। তিনি কোথাও না কোথাও এই রহস্যের থিওরিতো অবশ্যই লিখে রেখে গিয়েছেন! হয়তো তিনি এই গবেষণাটা যেই জায়গাতে করেছিলেন অর্থাৎ তার বাড়িতে গেলে এই গবেষণার বেশ কিছু সুত্র অবশ্যই পাওয়া যাওয়ার কথা। হয়তো ঐখানে গেলেই এই গবেষণায় সৃষ্ট শিশুর জটিলতা সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক কিছু জানা যাবে ,হয়তো এর সমাধানও সেখানে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই ৬ বছরে কী বাড়িটা তার আগের অবস্হাতেই আছে? নাকি সেই সব কিছুই বদলে ফেলা হয়েছে? এটাই একটা বড় প্রশ্ন!
.
এরপর মিসির আলি সাহেব ডাক্তার ওয়াজেদ আলির বাড়ি সম্পর্কে নানান তথ্য জোগাড় করেন। তিনি জানতে পারলেন যে ডাক্তার ওয়াজেদ আলির এই পৃথিবীতে আপন কেউ ছিলো না। তাই তার মৃত্যুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ঐ বাড়িটা পরিত্যাক্ত অবস্হাতেই পড়ে রয়েছে। ঐ বাড়িতে অবশ্য যে কারোই প্রবেশ নিষেধ। আর কেইবা ঐ বাড়িতে প্রবেশ করবে? তার বাড়িতে মূল্যবান জিনিস বলতে কিছুই তো আর পড়ে নেই! তার মৃত্যুর পরেই নানান চোর তার ঘরের মূল্যবান জিনিস পরিস্কার করার দায়িত্ব নেন।
.
এছাড়াও মিসির আলি সাহেব ছাড়া আর কেউই ডাক্তার ওয়াজেদ আলির এই অদ্ভুত গবেষণা সম্পর্কে কিছুই জানে না !
তাই কারো ঐ বাড়ি সম্পর্কে আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক!
.
এরপরেই মিসির আলি সাহেব ডাক্তার ওয়াজেদ আলির বাসার দিকে রওনা হলেন। ডাক্তার ওয়াজেদ আলির বাসা
টা আসলেই বেশ নির্জন একটা জায়গায়। তার বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে মিসির আলি সাহেবের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো। তাই বাড়ির আশেপাশে তিনি কাউকেই দেখতে পেলেন না! এরপর বাড়ির সামনে যেতেই তিনি দেখলেন বাড়ির বড় গেটে তালা দেওয়া। মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে তালা ভেঙে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করাটা ঠিক হবে না! তাই তিনি দেয়াল টপকে পাইপ বেয়ে জানালা দিয়ে ওয়াজেদ আলির বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলেন। মিসির আলি সাহেব আগে থেকেই জানতেন যে বাড়িতে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে না! তাই তিনি আগে থেকেই সাথে করে একটা টর্চ লাইট নিয়ে এসেছিলেন। এরপর সেই লাইটের আলোতে তিনি পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন। বাড়িটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কেউ এই বাড়িতে প্রবেশ করেনি। এতদিন ধরে বাড়িটা বন্ধ থাকায় পুরো বাড়িটা মাকরসার জাল আর ধুলাবালিতে ভরে গেছে! ঘরের জিনিস-পত্র ও সব এলোমেলো ভাবে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে! মিসির আলি সাহেব ভাবলেন, ডাক্তার ওয়াজেদ আলি যদি তার গবেষণা সম্পর্কে কোন নথিপত্রও রেখে যান এখানে সেগুলোও হয়তো এতদিনে ইদুরে কেটে শেষ করে ফেলেছে! এরপর তিনি হাঁটতে হাঁটতে ডাক্তার ওয়াজেদ আলির বাড়ির লাইব্রেরিতে গিয়ে পৌঁছালেন!! লাইব্রেরিতে এসে তিনি বেশ চমকে গেলেন। লাইব্রেরিটা বেশ বড়!
লাইব্রেরিতে মোট ৪টা বুক সেলফ রয়েছে! বুক সেলফ গুলোর উপর দিয়ে ধুলা-বালি আর মাকরসার জালে ভরা থাকলেও এর ভেতরের বইগুলোতে এর একটু আচও পড়েনি। আসলে বুক সেলফগুলো শক্ত ষ্টিল এবং কাঁচের তৈরী। যার ফলে কোন মানুষ ছাড়া এই বুক সেলফের ভেতর অন্য কোন প্রাণি ঢুকে বইগুলো নষ্ট করতে পারবে না। মিসির আলি সাহেব বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারলেন যে, একটা বইও নষ্ট হয়নি! ৩টা বুক সেলফ ভরাই অনেক রকমের বই। অবশ্য ৪র্থ বুক সেলফটা একটু ব্যাতিক্রম ! এই বুক সেলফে কোন বইই নেই! তবে অনেকগুলো হাতের লেখা ডায়েরি রয়েছে। এরপর বুক সেলফটা খুলে কয়েকটা ডায়েরি বের করে পর্যবেক্ষণ করেই মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে এই ডায়েরি গুলো কিসের! মিসির আলি সাহেব যেটা খোঁজার জন্য এই বাড়িতে এসেছেন সেগুলো এখন তার সামনে। প্রত্যেকটা ডায়েরিতেই ডাক্তার ওয়াজেদ আলির নানান গবেষণা সম্পর্কে নানান তথ্য নিজের হাতে লিখে ওয়াজেদ আলি এখানেই ক্রমিক নাম্বার দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন। তার বিভিন্ন সময়ের সব গবেষণা সম্পর্কিত ডায়েরিই এখানে রয়েছে! এরপর মিসির আলি সাহেব ডাক্তার ওয়াজেদ আলির শেষ গবেষণাটা নিয়ে যে ডায়েরিটা রয়েছে সেটা খুঁজতে লাগলেন। এরপরেই তিনি একটা ডায়েরি পেলেন। ডায়েরির উপর লেখাছিলো, "গবেষণা নাম্বার ৩৯,
মানুষের জিনে হিংস্র প্রাণির জিনের প্রবেশ।" মিসির আলি সাহেব ডায়েরিটা দেখেই বুঝতে পারলেন যে, এটাই সেই ডায়েরি যেই ডায়েরিতে শম্মীর রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। এই ডায়েরিটা পড়লেই হয়তো জানা যাবে যে, শম্মীর এই আচরণের প্রধান কারণটা কী? সে দিনের অর্ধেকটা সময় স্বাভাবিক এবং বাকি অর্ধেকটা সময় অস্বাভাবিক আচরণ করে কেনো? তার এই হিংস্রতা আর কতটা বৃদ্ধী পেতে পারে বা তার এই হিংস্রতার আয়ু আর কয় বছর?
.
এরপর মিসির আলি সাহেব ভাবলেন, এত বড় ডায়েরিটা এই বাড়িতে এই লাইটের আলোতে পড়াটা বেশ মুশকিল হবে! তার চেয়ে ভালো ডায়েরিটা বাড়িতে নিয়ে গিয়েই ভালোমতো পড়া যাবে! তখন এই গবেষণার রহস্যটাও ঠান্ডা মাথায় চিন্তাও করা যাবে।
.
এরপর মিসির আলি সাহেব যেই লাইব্রেরি থেকে বেড় হতে যাবেন, ঠিক সেই সময়েই জানালা দিয়ে অন্য কারো এই বাড়িতে ঢুকার শব্দ শুনতে পেলেন! মিসির আলি সাহেব পুরো আৎকে উঠলেন! তিনি ভাবলেন, এই বাড়িতেতো কারো আসার কথা না! তাহলে এতোরাতে জানালা দিয়ে কে বাড়িতে ঢুকলো? . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
.
.
. . . . . . . চলবে . . . . . .
.
.

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.