মানুষ খেকো পিশাচিনী - পর্ব ৩ - ভৌতিক গল্প/গোয়েন্দা কাহিনী/রহস্য

মানুষ খেকো পিশাচিনী
মাসুদ রানা
পর্ব :


এরপর আবির সাহেব অনেকটা ভয়ের সাথে দ্রুত দরজাটা ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। এরপর আবির সাহেব যা দেখলেন তা দেখার জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। দেখলো একটা ছোট্র বাচ্চা মেয়ের মাথাহীন রক্তাক্ত শরীর মেঝেতে পড়ে রয়েছে। আর শম্মী সেটাকে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। আবির সাহেবকে দেখেই শম্মী একটু মিষ্টি করে হেসে বললো:
-বাবা, তুমি ভুল ছিলে! মানুষের মাংস খেতে তিতা লাগে না। মানুষের মাংস আর রক্ত পৃথিবীর সবচেয়ে সুঃস্বাদু খাবার। আমি এখন থেকে রোজ মানুষের রক্ত আর মাংসই খাবো।
.
আবির সাহেব শম্মীর এই রকম কথা শুনে আর কিছুই বলতে পারেন না। শুধু চুপচাপ মেঝেতে বসে থাকেন। বাচ্চাটার এই ভয়ংকর চেহারা দেখে আবির সাহেবের মাথা জিমজিম করতে থাকে। বাচ্চা মেয়েটার শরীর থেকে কিছুটা দূরেই তার মগজবিহীন মাথা পরে রয়েছে! আর শম্মী সেই বাচ্চা মেয়েটার শরীর ছিড়েছিড়ে খাচ্ছে।
যদিও একটা ৯ মাসের শিশুর শরীরকে একটা ৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়ের পক্ষে পুরোটা একসাথে কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া সম্ভব না! তাই শম্মী ছুরি দিয়ে কেটে শুধু বাচ্চা মেয়েটার মগজ, হৃদপিন্ড আর কলিজা আলাদা করে ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছে। আর শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অল্প অল্প মাংস খায়! একটা ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ের পক্ষে এতটা হিংস্রতা প্রদর্শন পুরোপুরি অসম্ভব! তাকে দেখেই বোঝা যায় যে, তার ভেতরে একটা ২য় স্বত্তার উপস্হিতি রয়েছে। শম্মী যখন বাচ্চা মেয়েটার শরীরের রক্ত পান করছিলো তখন সে অনেকটা জোকের মতো করেই ঠোটটা মেয়েটার চামরার উপর রেখে চুষে চুষে রক্ত খাচ্ছিলো!
.
বাচ্চা মেয়েটাকে পুরোপুরি না খেয়ে শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গা গুলো খাওয়ার পরেই শম্মী তার বাবা আবির সাহেবকে বললো:
-বাবা, আমি আর খেতে পারছি না। তুমি একে বাড়ির বাহিরে ফেলে দিয়ে আসো। আমি এখন ঘুমাবো।
.
এতটুকু কথা বলেই শম্মী সেই অর্ধ খাওয়া বাচ্চা মেয়েটার শরীরকে মেঝেতে ফেলে রেখেই ঘুমাতে চলে গেলো। আবির সাহেব সেই বাচ্চা মেয়ের এই রকম মাথা, হৃদপিন্ডহীন শরীর দেখে ভয়ে কাপতে থাকে। এরপর বুঝতে পারে যে, তার আর কোন উপায় নেই ! তাকে এখন থেকে এইরকম অদ্ভুত পরিস্হিতীর সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। কারণ সে জানে যে, শম্মী ধীরে ধীরে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠবে। সে হয়তো এই ধরণের পৈশাচিক কর্মকান্ড
আরো করতে থাকবে!
সে যত বড় হচ্ছে ততো আরো বেশি ভয়ংকর হযে যাচ্ছে!
সে হয়তো এরপরে আরো মানুষ খুন করবে!
.
এরপর মাঝরাতে আবির সাহেব সেই অর্ধ খাওয়া বাচ্চা মেয়েটার শরীরটা বাড়ির পেছনে নিয়ে যান এবং একটা গর্ত করে লাশটা পুতে রাখেন । এতে তার বেশ অপরাধবোধ হয়! কিন্তু তার আর কিছুই করার ছিলো না!
.
এরপরে প্রায় সারারাতই আবির সাহেব শম্মীকে নিয়ে নানান ধরণের দুঃশ্চিন্তা করতে করতে জেগে থাকেন।
.
এরপর সকাল হতেই শম্মী ঘুম থেকে উঠে আবার স্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করে। সে ছাদে যায় আকাশ দেখে। নিজে নিজেই গুণ গুণ করে গান গায় । স্বাভাবিক যে সকল খাবার গুলো সে অপছন্দ করতো সেগুলোও খেতে চায়! আবির সাহেব শম্মীর এইরকম ভালো ব্যবহার দেখে খুব খুশি হন । কিন্তু তিনি জানেন যে, শম্মীর এই রকম স্বাভাবিক ব্যবহার ক্ষণিকের জন্যই! শম্মী রোজই কয়েক ঘন্টা এইরকম স্বাভাবিক ব্যবহার করেন। এরপরেই শুরু হয়ে যায় তার পৈশাচিকতা। আগের পৈশাচিকতা গুলো একটু ছোট হলেও এইবারের পৈশাচিকতা বেশ বড়, ভয়ংকর আর হিংস্র। একটা মানুষকে খুন করে তার মাংস খাওয়াতো আর কোন সাধারণ বা স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না!
.
সকাল ৮টা বাজে । আবির সাহেব তার ঘরে বসে বসে মিসির আলি সাহেবের আসার অপেক্ষা করছিলেন! মিসির আলি সাহেব বলেছিলেন যে তিনি আজ সকালেই আসবেন। আবির সাহেবের বর্তমান ধারণা মিসির আলি সাহেব বেশ বুদ্ধিমান ব্যক্তি এবং সেই হয়তো একমাত্র এই জটিল সমস্যার সমাধাণ করতে পারবেন! সেই হয়তো শম্মীকে বুঝতে পারবে এবং শম্মীর এই রকম পৈশাচিকতার পেছনের রহস্যটাও বের করতে পারবেন।
.
সকাল ৯টা বাজে । হঠাৎই আবির সাহেবের বাড়ির কলিং বেলটা বেজে উঠলো। আবির সাহেব দ্রুত গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। দরজাটা খুলেই দেখলেন মিসির আলি সাহেব একটা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। আবির সাহেব তাকে দেখেই বুঝতে পারলেন যে মিসির আলি সাহেব তার মেয়ে শম্মীর সাথে থাকতে এসেছেন।
এরপর তিনি মিসির আলি সাহেবকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসলেন! শম্মী প্রথমে মিসির আলি সাহেবকে দেখে বেশ অবাক হয়। কারণ শম্মী জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত তার বাবার কোন বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনকে এ বাড়িতে আসতে দেখেনি। কেন আসে না সেটা তার জানা নেই! শম্মী যখন আরো ছোট ছিলো তখন সে ভাবতো এই পুরো পৃথিবীতে মনে হয় সে আর তার বাবা ছাড়া আর কোন মানুষ নেই! এ বাড়িটাই হয়তো পুরো পৃথিবী! এই পৃথিবীতে শুধু টিকটিকি, ইদুর, বেড়াল, পাখি ছাড়া আর কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই । কিন্তু সে যখন প্রথম ছাদে যাওয়া শিখে তখন সে বুঝতে পারে এ পৃথিবীটা অনেক বড়। এই পৃথিবীতে তারা ছাড়াও আরো অনেক মানুষ ও আরো অনেক প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু তাদের বাড়িতে শুধু কেউ আসেনা।
.
এরপর আবির সাহেব , মিসির আলি সাহেবের কথামতোই মিসির আলি সাহেবকে তার বন্ধু হিসেবে শম্মীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। শম্মী বেশ স্বাভাবিক ভাবেই তার সাথে পরিচিত হয়। এরপর তারা ৩ জনে বেশ কিছুক্ষণ একসাথে বসে থাকে। এরপর হঠাৎ আবির সাহেব মিসির আলি সাহেব আর শম্মীকে বাড়িতে রেখে একটা জরুরী কাজ আছে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।
.
এখন বাড়িতে শুধু শম্মী আর মিসির আলি সাহেব! মিসির আলি সাহেব শম্মীকে খুব ভালো ভাবেই পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কিন্তু তার চোখে শম্মীর অস্বাভাবিক কিছুই ধরা পড়লো না! ৮-১০ টা স্বাভাবিক মেয়ের মতোই ব্যবহার করছিলো শম্মী। তার আচরণ একটা ৬ বছরের বাচ্চার মতই ছিলো!
.
আবির সাহেবের বলা শম্মীর কোন আচরণের সাথেই মিসির আলি এই শম্মীর আচরণের মিল খুঁজে পায় না।
বিষয়টা মিসির আলি সাহেবকে বেশ ভাবায়!
.
কিছুক্ষণ পর শম্মী মিসির আলি সাহেবকে কিছু না বলে একা একাই ছাদে যায়। মিসির আলি সাহেবও শম্মীকে অনুসরণ করে ছাদে যায়! ছাদে গিয়ে দেখেন, শম্মী আকাশ দেখছে! এরপর মিসির আলি সাহেব অনেকটা স্বাভাবিক ভাবেই শম্মীকে প্রশ্ন করলেন:
-আকাশ দেখতে তোমার ভালো লাগে?
-হ্যাঁ। খুব ভালো লাগে। (শম্মী)
-আর কী দেখতে ভালো লাগে?
-গাছপালা, পাখি আর শুধু আকাশ।
-হুম ভালো। আচ্ছা তোমার প্রিয় খাবার কী?
-আমি সব কিছুই পছন্দ করি। বিশেষ করে গরম ভাত আর চিংড়ি ভুনা আমার প্রিয় খাবার। আমার বাবা খুব ভালো চিংড়ি ভুনা করতে পারে!
-আচ্ছা শম্মী। তুমিতো এখন অনেক ছোট। তুমি কী জানো যে আফ্রিকার কিছু কিছু শিশুরা সাধারণ খাবার পছন্দ করে না। তারা মানুষ বা বিভিন্ন প্রাণির তাজা রক্ত, কাঁচা মাংস ইত্যাদি কাচা চিবিয়ে খায়।
-ধুর বোকা! আমি কি আফ্রিকা চিনি নাকি! আমিতো আমার এলাকাটাই চিনি না ভালোমতো। আর তুমিতো কিছুই জানো না। একটা মানুষ কি কখনো আবার অন্য একটা মানুষের রক্ত, কাঁচা মাংস চিবিয়ে খেতে পারে নাকি? এগুলোতো খায় জঙ্গলের হিংস্র প্রাণিরা।
-হাহাহা। তাই নাকি? তুমি এসব জানলে কিভাবে?
-আমার বাবা বলেছিলেন।
-আচ্ছা তুমি আর কী কী জানো?
.
.
এইভাবে আরো বেশ কিছুক্ষণ শম্মীর সাথে কথা বলতে থাকেন মিসির আলি সাহেব। কিন্তু শম্মীর ভেতর অস্বাভাবিক কিছুই লক্ষ করলেন না তিনি। যেমনটা আবির সাহেব তাকে বলেছিলেন! তিনি ভাবলেন তাহলে কী আবির সাহেব পুরো ঘটনাটা মিথ্যা বলেছে? নাকি পুরো ঘটনাটা গুছিয়ে বলেনি তাকে!
অনেক কিছুই হয়তো এড়িয়ে বলেছেন তাকে!!
.
মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারেন যে, পুরো ঘটনাটা বুঝতে হলে তাকে আগে শম্মীর সাথে আরো বেশি সময় কাটাতে হবে। তাকে শম্মীকে আরো কাছ থেকে চিন্তে হবে। এরপরেই বোঝা যাবে সমস্যাটা কী শম্মীর নাকি আবির সাহেবের নিজেরই!
.
এরপরে দুপুরের একটু আগে আবির সাহেব বাড়িতে ফিরলেন। বাড়িতে কোন কাজের লোক নেই বিদায় আবির সাহেবকেই রান্না করতে হয়! আবির সাহেব রান্না করে মিসির আলি সাহেব আর শম্মী দুজনকেই খাবার টেবিলে ডাকলেন। এরপর তারা ৩ জন মিলে এক সাথেই দুপুরের খাবার শেষ করলেন। এরপর যে যার ঘরে বিশ্রামের জন্য চলে গেলেন। বাকিটা সময় শম্মী,আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেব আলাদা আলাদা যার যার ঘরে বসেই কাটালেন! আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেব দুজনেই অবশ্য যার যার ঘরে বসে শম্মীকে নিয়েই চিন্তা করছিলো!
.
এরপর দেখতে দেখতে প্রায় বিকাল হয়ে গেলো। মিসির আলি সাহেব দেখলেন আবির সাহেব বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। শম্মী কী করছে? এটা দেখতে তিনি শম্মীর ঘরের দিকে গেলেন। শম্মীর ঘরের দিকে যেতেই মিসির আলি সাহেব দেখলেন শম্মীর ঘরের দরজাটা হালকা করে খোলা রয়েছে। দরজার হালকা ফাকা দিয়েই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, শম্মী ঘরের জানালার পাশে অন্য মনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিসির আলি সাহেব শম্মীর ঘরে ঢুকতে নিয়েও ঢুকলেন না। তিনি লক্ষ করলেন হঠাৎ শম্মীর মুখের ভঙ্গি বেশ অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে! তাই সে শম্মীকে না ডেকে, দরজার সামনে দাঁড়িয়েই শম্মীর সব কর্মকান্ড দেখতে লাগলো!
.
শম্মী প্রথমে চুপচাপ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো । এরপর মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত ধরণের শব্দ করতে লাগলো । শব্দটা বেশ মধুর । যে কাউকে পাগল করতে পারার মতো! এরপর জানালা দিয়ে বেশ কিছু পাখি উড়ে শম্মীর হাতের সামনে চলে আসলো। শম্মীর কাছে এসেই পাখিগুলো বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো। এটা দেখে মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে অস্বাভাবিক ভাবে হলেও মেয়েটা পাখিদের সম্মোহন করতে পারে! এর কিছুক্ষণ পর শম্মী একটা পাখিকে ধরলো আর বাকি পাখি গুলোকে হাতের ইশারা করতেই উড়ে গেলো। সেই একটা পাখির দিকে শম্মী বেশ কিছুক্ষণ হিংস্র ভাবে তাকিয়ে রইলো । এরপর হঠাৎ করেই পাখিটার মাথা ধরে একটা মুচর দিয়ে পাখিটার শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেললো। এরপর শম্মী অনেকটা জোকের মতো করেই পাখিটার শরীরের রক্ত খেতে লাগলো। মিসির আলি সাহেব ঘটনাটা দেখে বেশ অবাক হলেন। সকালের সেই শম্মীর সাথে এই শম্মীকে মিসির আলি সাহেব কিছুতেই এক করতে পারলেন না। শম্মীর সকালের আচরণ আর এখনকার আচরণ পুরো ভিন্ন।
.
এরপর মিসির আলি সাহেব হঠাৎ দরজাটা ধাক্কা দিয়ে শম্মীর সামনে এসে হাজির হন। শম্মী তখনো পাখিটাকে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছিলো। মিসির আলি সাহেব ভেবেছিলেন যে হঠাৎ করে তাকে দেখে শম্মী বেশ চমকে যাবে! কারণ সকালে শম্মী তার সাথে মিথ্যা কথা বলেছিলো এবং ছলনা করেছিলো। সকালে শম্মী যে রুপটা দেখিয়েছিলো এটা তার আসল রূপ ছিলো না! এখনকারটা আসল রূপ!
.
কিন্তু মিসির আলি সাহেবকে হঠাৎ করে ঘরে ঢুকতে দেখেও শম্মী বিন্দুমাত্র চমকালোনা! সে মিসির আলি সাহেবকে কিছুই বললো না। বড়জোর একবার শুধু তার দিকে আড়চোখে তাকালো!
শম্মী এমন ভাব করলো যে, এটাতো হওয়ারই ছিলো! মিসির আলি সাহেবেরতো এখন একবার তাকে দেখার জন্য আসার কথাই ছিলো। এতে এতটা অবাক হওয়ার কী আছে?!
.
শম্মী মিসির আলি সাহেবের দিকে মনোযোগ না দিয়ে বরং তার পাখিটা খাওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দিলো! এরপর পুরো পাখিটা খাওয়ার শেষে শম্মী একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে মিসির আলি সাহেবকে বললো:
-আপনি আমায় নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না! আমি এখন ঘুমাবো। আপনি এখন যেতে পারেন!
.
এরপর শম্মী বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। বিকাল বেলা ঘুম?! মিসির আলি সাহেব কয়েক মুহুর্ত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। এরপর শম্মীর ঘর থেকে বেরিয়ে আবার নিজের ঘরে চলে যায়! এরপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিসির আলি সাহেব ভাবতে থাকেন, এই শম্মীর আচরণের সাথে আবির সাহেবের ব্যাখ্যা করা শম্মীর আচরণের বেশ মিল আছে! তার মানে এটাই শম্মীর আসল রূপ?! যদিও সকাল বেলার শম্মী অনেকটা ভিন্ন।
একটা ৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়ে ২ বেলা ২ রকম রূপ নেয় কিভাবে এটা নিয়েই ভাবতে থাকে মিসির আলি। তাহলে কি শম্মীর ভেতর দুটো সত্তার উপস্থিতি রয়েছে?!
.
মিসির আলি সাহেব যেনো এবার শম্মীকে কিছুটা বুঝতে পারছেন। তিনি হয়তো এখন থেকেই রহস্যটা সম্পর্কে ধারণা করতে পারছেন। মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারছিলো যে, শম্মী এবং তার রহস্যকে ভালোমতো বুঝতে হলে আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে তাকে। অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে শিগ্রই । শম্মী সম্পর্কে অনেক কিছুই পরিস্কার হতে হবে।
.
এরপর শম্মীর সকালের আচরণ এবং বিকালের আচরণ নিয়ে অনেক্ষণ নানান কথা ভাবতে থাকেন মিসির আলি সাহেব। শম্মীর এই ধরণের অদ্ভুত আচরণের পেছনে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন তিনি! কিন্তু শম্মীর এই হিংস্র আচরণের পেছনে কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারলেন না তিনি। শম্মী অবশ্যই কোন পিশাচিনী নয়! এটা তিনি নিশ্চিত। কারণ এগুলো কেবল মানুষের কল্পনা। শম্মীর এই ধরণের অদ্ভুত আচরণের পেছনে নিশ্চই একটা বড় রহস্য রয়েছে। যেটা নিশ্চই এখন মিসির আলির অনেক কাছে আছে! কিন্তু সেটা সে খুঁজে পাচ্ছে না। মিসির আলি সাহেব ভাবলেন, শম্মীর রহস্য উদঘাটনের আগে তার মা সম্পর্কে সব তথ্য ভালো করে জেনে নিতে হবে। কারণ মায়ের অনেক আচরণই সন্তান পেয়ে থাকে । তাই এখন তার আবির সাহেবের সাথে এ বিষয়ে কিছু কথা বলা উচিত!
.
এইসব ভাবতে ভাবতে প্রায় সন্ধ্যাঁ হয়ে যায়। এরপর আবির সাহেবই ২কাপ কফি নিয়ে মিসির আলি সাহেবের সাথে দেখা করতে তার ঘরে প্রবেশ করেন। এক কাপ কফি মিসির আলি সাহেবকে দিয়েই প্রশ্ন করা শুরু করেন:
-এই যে মিসির সাহেব, আজ সারাদিন আপনার কেমন কাটলো? শম্মীকে কেমন দেখলেন? তার অস্বাভাবিকতা কী আপনি লক্ষ করেছেন?
-হ্যাঁ করেছি। কিন্তু আপনি অনেক কথাই আমাকে পরিস্কার ভাবে বলেননি বা আমার থেকে লুকিয়েছেন! তাই বুঝতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। (মিসির আলি)
-যেমন?
-যেমন ধরুণ আপনার মেয়ে
কিন্তু সব সময় হিংস্র আচরণ করে না। দিনের অর্ধেকটা সে সুস্হ্য থাকে এবং বাকি অর্ধেকটা সে অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে।
সে একটা শরীরকে দুটো সত্তায় উপস্থাপন করে!
-হ্যাঁ। আমিও এটা লক্ষ করেছিলাম। কিন্তু আমার সমস্যাটা দিনের বাকি অর্ধেকটা নিয়ে। যখন শম্মী অস্বাভাবিক আচরণ করে! তাই ভেবেছিলাম দিনের এই প্রথম অর্ধেক সময়ে তার স্বাভাবিক আচরণের তথ্যটা আপনার কোন কাজে আসবে না!
-বুঝলাম। আচ্ছা, আপনার স্ত্রী সম্পর্কে কিছু বলুন? সে কী সব সময় স্বাভাবিক ছিলো? নাকি মাঝেমধ্যে শম্মীর মতই অদ্ভুত আচরণ করতেন? অর্থাৎ আপনার স্ত্রীর কোন আচরণ কী আপনি আপনার মেয়ে, শম্মীর ভেতর লক্ষ করেন?
-না! আমার স্ত্রী একেবারে সাধারণ একটা মেয়েছিলো। তার মধ্যে আমি কখনো কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ করিনি। আর সে একজন শিক্ষিতা মেয়ে ছিলো। সে এইসব অদ্ভুত বিষয়ে কখনোই বিশ্বাস করতো না। যদিও আমিও করতাম না। তবে এখন করি!
-আপনার মেয়ে শম্মী যখন তার গর্ভে ছিলো তখন কী সে আপনাকে কোন অস্বাভাবিক বা অদ্ভুত কথা বলেছিলো? যেটার হয়তো আপনি তখন গুরুত্ব দেননি! তাই হয়তো এখন মনে করতে পারছেন না?
একটু ভালোভাবে মনে করে বলার চেষ্টা করুন ?
-না। আসলেই এইরকম অদ্ভুত বিষয়ে সে আমায় কখনোই কিছু বলেনি।
-আচ্ছা আপনার স্ত্রীর মৃত্যুটা কী একেবারেই স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো?
-হ্যাঁ। আপনাকেতো আমি আগেই এ বিষয়ে বলেছিলাম যে, শম্মী হওয়ার সময় অপারেশন থিয়েটারেই সে মারা যায় !
-আচ্ছা অপারেশনটা কে করেছিলো? তার কী কোন ভুল হয়েছিলো ?
-প্রশ্নই উঠেনা! অপারেশনটা করেছিলো আমার এক ভালো বন্ধু। ডাক্তার ওয়াজেদ আলি । সে একজন অনেক বড় পর্যায়ের ডাক্তার এবং প্রাণি বিষয়ক গবেষকও ছিলেন। তিনি ভিন্ন জিনের দুটি প্রাণির মধ্যে ক্রস ঘটিয়ে অনেকগুলো অদ্ভূত ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণি আবিষ্কারের মাধ্যমে অনেক গুলো জাতিয় পুরস্কারও পান। তার অপারেশন কখনোই ভুল হতে পারে না! এছাড়াও তার সাথে আমাদের এমনিতেই অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। আমার স্ত্রী তাকে ভাই বলেই ডাকতো। সে আমার স্ত্রীকে এক ধরনের বিশেষ ভ্যাকসিন ও দিতো প্রতি মাসে শম্মী আমার স্ত্রীর গর্ভে আসার পর থেকে। যাতে তার শরীর বা মন কখনো দুর্বল না হয়! তাই তার কোন ভুল হতে পারে না। হয়তো শম্মীই খারাপ ভাবে তার মার শরীরে আটকে ছিলো তাই তার মা মারা গেছে!
-হয়তো মানে? আপনিতো নিজেও একজন ডাক্তার। এরপরে আপনি তার কাছে আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণটা জানতে চাননি ?
-দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা জানা হয়নি। শম্মীর জন্মের সময়ই তার মা মারা যাওয়ায় তখন আমি বেশ চিন্তায় মন মরা হয়ে বসে থাকি। তাই এই মারা যাওয়ার কারণ বিষয়ে তার কাছ থেকে তখন কিছুই জানা হয়নি ! আর কাকতালীয় ভাবে সেদিনই ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান!
-হুম। কিন্তু ঐ ভ্যাকসিনের বেপারটা একটু খটকা . . . . . . . .
. . .
.
.
মিসির আলি সাহেব এতটুকু কথা বলার পরেই হঠাৎ তার ঘরের পেছনের দেয়াল বেয়ে কারো নিচে নামার শব্দ পায় সে। মিসির আলি সাহেব সাথে সাথেই আৎকে উঠে! এরপর আবির সাহেবকে বললেন:
-দেয়াল বেয়ে কারো নিচে নামার শব্দ পেলাম! আপনি কী পেয়েছেন?
-না তো! দেয়াল বেয়ে আবার কে নামবে ? আমার বাড়িতেতো আমি আর আমার মেয়ে ছাড়া আর কেউ থাকে না। আর গেটতো তালা দেওয়া। চাবিও আমার কাছে!
-শম্মী এখন কোথায়?
-আজ বিকাল বেলা থেকেইতো দেখলাম সে ঘুমাচ্ছে। এখানে আসার আগেও দেখে আসলাম সে ঘুমাচ্ছে!
.
.
মিসির আলি সাহেব হয়তো ভয়ংকর কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলো ! তাই সে দ্রুত ছুটে শম্মীর ঘরের দিকে গেলেন। আবির সাহেবও তার পিছু পিছু ছুটে শম্মীর ঘরে গেলেন। শম্মীর ঘরে গিয়ে তারা দুঁজনেই পুরো অবাক হয়ে গেলেন। আবির সাহেবতো বেশ আৎকেই উঠলেন। কারণ পুরো ঘরের কোথাও শম্মী নেই! এরপর পুরো বাড়ি খুজেও আবির সাহেব আর মিসির আলি সাহেব কোথাও শম্মীকে পেলো না! এরপর তারা ছাদে গেলো। কিন্তু দেখলো ছাদেও শম্মী নেই ! এইদিকে বাড়ির গেটও তালা দেওয়া। তাহলে শম্মী মুহুর্তের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেলো? আবির সাহেব এবং মিসির আলি সাহেব দুজনেই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন! . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

. . . . . চলবে . . . .

© bnbooks.blogspot.com

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.