বুড়ি - হুমায়ূন আহমেদ - ছোট গল্প - Humayun Ahmed Bengali Short Story

বুড়ি 

হুমায়ূন আহমেদ




রাত দুপুরে কুঁ-কু পো-পো শব্দ।
সবে শুয়েছি, ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছে- বিচিত্র শব্দে উঠে বসলাম,
ব্যাপারটা কী? আমেরিকায় নতুন এসেছি। এদের কাণ্ডকারখানার সঙ্গে এখনো
তেমন পরিচয় হয়নি। ক্ষণে-ক্ষণে চমকে উঠতে হয় ।
এখন যেখানে আছি তার আমেরিকান নাম রুমিং হাউস। পায়রার খোপের মতো ছোট্ট একটা ঘর। সেই ঘরে সোফা কাম বেড, পড়ার টেবিল। টেবিলের একপাশে একটা এফ.এম. রেডিও । এই হলো আমার ঘরের সাজসজা। ভাড়া পঞ্চাশ ডলার--- জলের দাম বলা চলে । আমেরিকান এক দম্পতি তাদের বসতবাড়ির দোতলার সব ক’টা ঘর ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। দরিদ্র বিদেশী ছাত্ররা এইসব ঘরে থাকে। কমন বাথরুম। রান্নাঘর নেই। খেতে হয় বাইরে। সিগারেট খাওয়া যায় না, ল্যান্ড লেডি ঘর ভাড়া দেয়ার সময় কঠিন গলায় এই তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন। উচু ভল্যুমে স্টেরিও শোনা নিষিদ্ধ। নানান বায়নাক্কা। তবুও এখানে উঠে এসেছি। কারণ- সস্তা ঘর ভাড়া, তা ছাড়া জায়গাটা ইউনিভার্সিটির খুব কাছে। ওয়াকিং ডিসটেন্স। নর্থ ডেকোটার এই প্রচণ্ড শীতে দূর থেকে ক্লাস করতে আসা সম্ভব নয়। একটা গাড়ি কিনে নেব সেও দুরাশা। দুপুরে ইউনিভার্সিটি মেমোরিয়াল ইউনিয়নে খেয়ে নেই। সন্ধ্যায় যখন ঘরে ফিরি সঙ্গে থাকে একটা হ্যামবার্গার। ঐ খেয়ে রাত পার করি ।
রুমিং হাউসে উঠে এসেছি। পনেরো দিন হলো । কারো সঙ্গে তেমন পরিচয় হয়নি। আমার পাশের রুমে আছে। ভারতীয় ছাত্র অনন্ত নাগ । সে আমাকে দেখলেই “আবে ইয়ার’ বলে একটা চিৎকার দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে। কথাবার্তা এই পর্যন্ত । কোনার দিকের ঘরে থাকে কোরিয়ান ছাত্র "হান” । সে ইংরেজি একেবারেই জানে না। আমাকে একদিন এসে বলল, “হেড পেই মার্ডার, মার্ডার’। অনেকক্ষণ পরে বুঝলাম।-- সে বলার চেষ্টা করছে মাথার যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছি। তার সঙ্গে ভাষার কারণেই ভাব হবার কথা নয়। আমার ঠিক মুখোমুখি ঘরে থাকে ফিলিপিনো মেয়ে তোহা । তেইশ-চব্বিশ বছর বয়স, অত্যন্ত রূপবতী । এই মেয়েটির ভাবভঙ্গি বিচিত্র । সে কারো সঙ্গে কথা বলে না। প্রায়ই গভীর রাতে ফুপিয়ে কান্দে। পঞ্চম বোর্ডার এক আমেরিকান বুড়ি, নাম এলিজাবেথ । শুরুতেই আমাকে সাবধান করে দেয়া হয়েছিল-- আমেরিকান বুড়িদের কাছ থেকে যেন শত হস্ত দূরে থাকি। আমেরিকান সমাজে বুড়োবুড়ির কোনো স্থান নেই। তারা খুবই নিঃসঙ্গ। কাজেই কথা বলার কাউকে পেলে বুড়োবুড়িরা তার জীবন অতিষ্ঠা করে দেয়। অনন্ত নাগ আমাকে বলে দিয়েছে এই বুড়িকে পাত্তা দেবে না। পাত্তা দিয়েছ কি মরেছি। সিন্দাবাদের ভূতের মতো কাধে চেপে বসবে, আর নামাতে পারবে না।
বুড়ি কয়েক বারই আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে, আমি অনন্ত নাগের উপদেশ মনে রেখে শুকনো গলায় বলেছি- এখন তো কথা বলতে পারব না, পড়াশোনা করছি। বুড়ি সঙ্গে সঙ্গে বলেছে, “আচ্ছা আচ্ছা, পরে কথা হবে। এক জাহাজের যাত্রী, দেখা তো হবেই... হা-হা-হা । বরং এক কাজ করো, তোমার লেখাপড়ার চাপ যখন কম থাকবে আমার ঘরে চলে এসো। গল্প করব।”
আমি এখনো তার ঘরে যাইনি। যাবার উৎসাহ বোধ করিনি ।
এখন এই মধ্যরাতে বিছানায় জেগে বসে আছি- শুনছি। বিচিত্র কো-কো শব্দ। মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল। পরদিন ভোরে মিডটার্ম পরীক্ষা। ভালো ঘুম দরকার। এ-কী যন্ত্রণা! শব্দের উৎসের সন্ধানে দরজা খুলে বাইরে বের হলাম। দেখা হলো অনন্ত নাগের সঙ্গে। সেও বিরক্ত মুখে বের হয়েছে। আমি বললাম, কীসের শব্দ?”
অনন্ত শুকনো গলায় বলল, “ব্যাগ পাইপ।”
‘ব্যাগ পাইপটা কী?”
“এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র। আইরিশরা বাজায়। ফুসফুসের মারাত্মক জোর লাগে৷ ”
“বাজাচ্ছে কে?”
‘এলিজাবেথ। কী যন্ত্রণা বল তো দেখি! তুমি কি বুড়িকে বলে আসবে এখন মিডনাইট । বুড়ির কোনো রাইট নেই মিডনাইটে আমাদের বিরক্ত করার।”
আমি এলিজাবেথের ঘরের দিকে এগুলাম। দরজা হাট করে খোলা। বুড়ি বিছানায় পা তুলে ব্যাগ পাইপ নিয়ে বসে আছে। এই বাদ্যযন্ত্রটি বাজাতে ফুসফুসের প্রচণ্ড জোর লাগার কথা। আশি বছরের বুড়ি এই জোর কোথায় পেল কে জানে?
আমাকে দেখেই বুড়ি হাসিমুখে উঠে এল— ‘আহমাদ ওয়েলকাম!”
প্রথমেই অভদ্র হওয়া যায় না। আমি বললাম, “কেমন আছ?”
‘ভালো। খুব ভালো। গ্যারাজ সেল থেকে একটা ব্যাগ পাইপ কিনে ফেললাম। একেবারে ব্রান্ড নিউ। মাত্র কুড়ি ডলারেই দিয়ে দিল। চমৎকার না। জিনিসটা ?”
“হ্যা, চমৎকার।’
‘অনেকদিন থেকেই শখ ছিল একটা বাদ্যযন্ত্র বাজান শিখব তাই...”
‘ব্যাগ পাইপ বাজান তো খুব কঠিন। শুনেছি ফুসফুসের খুব জোর লাগে।”
‘তা লাগে প্রথমে বাতাস ভরাটাই কষ্ট । একবার ভরা হয়ে গেলে মোটামুটি সহজ বলা চলে। তুমি বস না- দাঁড়িয়ে আছ কেন?”
“আমি অন্য একদিন এসে বসব। কাল আমার একটা পরীক্ষা, মিডটার্ম। আমার ঘুম দরকার।’
‘অফকোর্স। আমার বাদ্যযন্ত্রে তোমার ঘুমের অসুবিধা করলাম কি?”
“কিছুটা করেছ।”
‘সরি! এক্সট্রিমলি সরি! আর বাজাব না। তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাও । জাস্ট এ মিনিট, তোমাকে এক মগ হট কোকা বানিয়ে দিচ্ছি। হট কোকার মতো ঘুমের অষুধ হয় না।”
“তোমাকে ধন্যবাদ, হট কোকা খেতে ইচ্ছা করছে না।” “না বললে হবে না। আমার কথা শোন, খেয়ে দেখ। মরার মতো ঘুমুবে । হাসবেন্ডের মৃত্যুর পর আমার অনিদ্রা রোগ হলো। সারারাত জেগে থাকি, ঘুম আসে না। তখন এই অষুধটা আবিষ্কার করলাম।”
আমি লক্ষ করলাম কথা বলতে বলতে বুড়ি হিটিং কয়েল দিয়ে পানি গরম করে ফেলেছে । কোকা প্ৰস্তুত ।
আমাকে খেতে হলো। খেতে খেতে বুড়ির গল্প শুনতে হলো। তার চার ছেলে-মেয়ে। একেক জন একেক জায়গায় । গত দশ বছর ধরে কারো সঙ্গে দেখা নেই। তবে যোগাযোগ আছে। ওরা চিঠি লেখে, ছবি পাঠায় ।
‘আহমাদ, তুমি আমার নাতি-নাতনিদের ছবি দেখবা?” “আজ থাক, অন্য একদিন দেখব।” “আচ্ছা থাক। তুমি আরাম করে ঘুমাও । গরম কোকা খেয়েছ- চমৎকার ঘুম হবে। দেখবে এক ঘুমে রাত কাভার।'
গরম কোকা খাওয়ার কারণেই হয়তো সেই রাতে এক ফোটা ঘুম হলো না। বিছানায় এপাশি-ওপাশ করে কাটালাম। ভোরবেলা বাথরুমে যাচ্ছি, এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা । সে হাসিমুখে বলল, “কেমন ঘুম হলো বল তো? আমি বিরক্তি চেপে রেখে বললাম, ভালোই।”
বুড়ি উল্লসিত গলায় বলল, “বলেছি না। চমৎকার ঘুম হবে। কি, কথা ঠিক হলো?”
রুমিং হাউসের বুড়ি আমাদের খুব বিরক্ত করতে লাগল। জানা গেল। সে ডাকযোগে ব্যাগ পাইপ বাজান শিখছে। ডাকযোগে বাইবেল শেখা যায় জানি, কিন্তু বাদ্যযন্ত্র বাজােনও যে শেখা যায়, তা জানতাম না । এই বিচিত্র দেশে সবই সম্ভব ।
কিছুদিন পরপরই মাঝরাতে কো-কো পো-পো শব্দ হতে থাকে। তিক্তবিরক্ত অবস্থা। একদিন অনন্ত নাগ খুব চিৎকার-চোঁচামেচি করে এল,
“তুমি বাজনা শিখছ ভালো কথা। দুপুর রাতে কেন? দিনে শিখতে পার না? দিনে আমরা কেউ থাকি না, ঘর থাকে ফাঁকা ।” “দিনে আমার নানান কাজকর্ম থাকে ।” “তোমার আবার কীসের কাজকর্ম? তুমি ঘুরে ঘুরে বেড়াও।” “এটাই আমার কাজ।” “খুব ভালো কথা। রাতে যখন তোমার ঐ যন্ত্র বাজাও— দরজাটা বন্ধ করে রাখতে পার না?”
“এই বাদ্যযন্ত্র ফাঁকা জায়গায় বজাতে হয়। ইনস্ট্রাকশানে লেখা আছে। বিশ্বাস না করলে পড়ে দেখতে পাের।”
“তোমার নামে বাড়িওয়ালার কাছে আমরা নালিশ করব।”
“করতে চাইলে কর। তাতে লাভ হবে না। বাড়িওয়ালার সঙ্গে আমার যে লীজ এগ্রিমেন্ট হয়েছে সেখানে লেখা নেই যে, ব্যাগ পাইপ বাজান যাবে না।”
“তুমি অতি নিম্নশ্রেণীর একটি প্রাণী।”
“ছিঃ ছিঃ! এমন কথা বলবে না। আচ্ছা যাও, আর বাজাব না।”
কয়েক দিন সত্যি বাজনা বন্ধ থাকে, আবার শুরু হয়। রাগে দাঁত কিড়মিড় করি। কিন্তু বুড়ি সদাহাস্যময়ী। দেখা হলে একগাদা কথা বলবেই।
“আমার নাতনি এ্যানির দাঁত উঠেছে। ছবি পাঠিয়েছে। দেখবে? কী যে সুন্দর! এঞ্জেলের মতো লাগে। আমার মনে হয় এই পৃথিবীতে তার মতো সুন্দর বাচ্চা জন্মায়নি। সামারে তাকে দেখতে যাব । ছেলেকে লিখেছি টিকিট পাঠাতে । ও টিকিট না পাঠালে যেতে পারব না। ও লিখেছে পাঠাবে।”
ছেলে টিকিট পাঠায় না। বুড়ির যাওয়া হয় না। আমেরিকার অসংখ্য হতদরিদ্র বুড়িদের সে একজন। সোস্যাল সিকিউরিটির টাকায় কোনোক্রমে বেঁচে আছে। বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচ এবং মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স দিয়ে বুড়ির কাছে কিছুই থাকে না। এর মধ্যে তার আবার পার্টি বাতিক আছে। সস্তা ধরনের কয়েক বোতল মদ কিনে সে প্রায়ই পার্টি লাগিয়ে দেয় । ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে এসে দেখি দরজার গায়ে নোট ঝুলছে। নোটে প্যাচান হরফে লেখা --
প্রিয় বন্ধু,
আজকের দিনটি আমার জীবনের বিশেষ দিন । এই দিনে আমার স্বামী ববের সঙ্গে প্রথম দেখা । এই দিনেই আমরা প্রথম একসঙ্গে ডিনার করি এবং বব আমাকে বলে— I love you. বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে রাখার জন্যে ছোট্ট একটা পার্টির আয়োজন করেছি। আয়োজন অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তুমি আসবে ।
পার্টিতে যেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই। বুড়ি দশ মিনিট পরপর এসে বলবে, কই এখনো এলে না। সবাই এসে গেছে শুধু তোমার জন্যে অপেক্ষা। আমি যাবার পর দেখি- আমিই শুধু এসেছি। আর কেউ আসেনি। বুড়ি এক কথা সবাইকে বলে বলে আসছে।
ঘরে মোমবাতি জুলছে। টেবিলে কিছু পটেটাে চিপস, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম এবং দু'বোতল রেড ওয়াইন- যার দাম বড়জোর ছ’ থেকে সাত ডলার ।
ঠোঁটে টকটকে লাল রঙ মেখে বুড়ি হাসিমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার আনন্দের সীমা নেই। পাটিতে লোক বলতে আমরা ক’জন ।
বাড়িওয়ালা-বাড়িওয়ালী কখনো আসে না। বুড়ির বাইরের কোনো বন্ধুবান্ধবও নেই। আমাদেরই সে বোধহয় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ধরে নিয়েছে।
পার্টির মধ্যমণি হয়ে লাল মদের গ্রাস হাতে নিয়ে বুড়ি এর-তার কাছে যায়। উজ্জ্বল চোখে বলে, “জীবন বড় আনন্দময়, কি বল?”
আমরা বিরস মুখে বলি, “হ্যাঁ।”
‘বড় সুন্দর পার্টি হলো। অসাধারণ।”
“হ্যা, অসাধারণ।”
“আমার মনে হচ্ছে, আমি আমার ইয়ুথে ফিরে গেছি।”
‘খুবই ভালো কথা— ফিরে যাও।”
এলিজাবেথ তার যৌবনে ফিরে যাবার ব্যবস্থা এত ঘনঘন করতে লাগল। যে, আমরা তিক্ত-বিরক্ত হয়ে গেলাম। পাটিতে যাওয়া বন্ধ। সে এসে করুণ গলায় বলে, ‘আজ আমার এমন একটা বিশেষ দিন আর তোমরা কেউ আসবে না?
“পড়াশোনার খুব চাপ।”
‘আজ দিনটি আমার জন্যে খুবই স্পেশাল। আজ বব আমাকে প্রপোজ করেছিল । ষাট বছর আগের কথা অথচ মনে হয় সেদিন...’
“প্লিজ, আজ যেতে পারব না। এ্যাসাইনমেন্ট রয়েছে।”
“ঘণ্টাখানিকের জন্যে এসো ।”
“অসম্ভব। একেবারেই অসম্ভব।”
বুড়ি একা একাই পার্টি করে এবং একসময় ভয়াবহ ব্যাগ পাইপ বেজে উঠে। আমাদের কাউকে-না-কাউকে ছুটে যেতে হয়। আমাদের কাছে অসহ্য বোধহয় । এ-কী যন্ত্রণা!
যাই হােক, শীতের শুরুতে যন্ত্রণার অবসান হলো- জানা গেল, টাকা পয়সার অভাবে এলিজাবেথ তার ব্যাগ পাইপ বিক্রি করে দিয়েছে । আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। বাচা গেল, এখন আর মাঝরাতে ঘুম ভেঙে ছুটে যেতে হবে না ।
এক বিকেলের কথা। অনন্তের কাছে শুনলাম বুড়ি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। অবস্থা খুব ভালো নয়। মনটা একটু খারাপই হলো। সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে বুড়িকে দেখতে গেলাম। বুড়ি মহাখুশি। উজ্জ্বল চােখে বলল, “কার্ড, কার্ড এনেছ?”
অসুস্থ কাউকে দেখতে হলে কার্ড নিয়ে যাওয়ার নিয়ম আছে। আমি গেট ওয়েল কার্ড নিতে ভুলে গেছি।
এলিজাবেথ বলল, “আমি কার্ডগুলি জমাচ্ছি। তুমি পরেরবার আসার সময় কার্ড নিয়ে এসো ।”
“আচ্ছা, আনব।”
“এই দেখ হানি কী সুন্দর কার্ড দিয়েছে! এই কার্ডটা দিয়েছে “তোহা’ । , আহা! মেয়েটা বড় ভালো। অনন্ত কী করছে দেখ! শুধু যে কার্ড দিয়েছে তাই না, ফুলও নিয়ে এসেছে। বেচারার টাকা পয়সা নেই— এর মধ্যে এত খরচ । আমি খুব রাগ করেছি।”
বুড়ির আনন্দ দেখে বড় ভালো লাগল। ভিজিটিং আওয়ারের শেষে বের হচ্ছি-- বুড়ি গলার স্বর নামিয়ে বলল, “তোমাদের কাছে আমার একটা ক্ষমাপ্রার্থনা করার ব্যাপার আছে।”
আমি আগ্রহ নিয়ে তাকালাম। বুড়ি লাজুক গলায় বলল, “ব্যাগ পাইপ কেন বাজাতাম জান? একা একা থাকতে এত খারাপ লাগত! কুৎসিত বাজনাটা বাজালেই তোমরা কেউ না কেউ আসতে- খানিকক্ষণ কথা বলতে পারতাম । স্যারি! তোমাদের কষ্ট দিয়েছি।”
আমার মনটা অসম্ভব খারাপ হলো । কোনো কথা বলতে পারলাম না।
বুড়ি দু’মাস রোগভোগ করে সুস্থ হলো। তার বাড়ি ফেরা উপলক্ষে আমরা ছোট্ট একটা পার্টির ব্যবস্থা করলাম। শুধু পাটিই না- বুড়ির জন্যে সামান্য উপহারও আছে- নতুন একটা ব্যাগ পাইপ। আমরা সবাই চাঁদা করে কিনেছি।
আমেরিকানরা কাঁদতে পারে না— এই কথা যে বলে সে মহামূর্খ। অনন্ত নাগ যখন ব্যাগ পাইপ বুড়ির হাতে তুলে দিল— বুড়ি অবাক হয়ে আমাদের সবার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর শিশুদের মতো চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। কান্নার এমন মধুর দৃশ্য আমি আমার জীবনে খুব বেশি দেখিনি ।

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.