প্রথমে প্রণাম করি প্রভু করতার।
স্বর্গ মর্ত্য পাতাল সৃজন যাহার।।
অষ্টাদশ সহস্র আলমে ত্রিভুবন।
সৃজন করিলা নিজ মহিমা কারণ।।
আঠার হাজার বর্ণে সৃজি নিরঞ্জন।
অনুক্ষণ দিবা রাত্রি দেয়ন্ত ভক্ষণ।।
আদ্য শুদ্ধ জ্ঞান প্রভু মহিমা সাগরে।
আঠার হাজরে মৈধ্যে সৃজন কলেবর।।
জার যেবা অন্ন প্রায় ভৈক্ষে নিরন্তর।
অনুক্রমে দিতে আছে ত্রিজগ ঈশ্বর।। (১০)
বিনি মাতা বিনি পিতা বিনি জন্মে জন্ম।
বিনি গুরু শিক্ষাবন্ত অপরূপ কর্ম।।
বিনি স্তিরি বিনি পুত্র শুদ্ধ কলেবর।
বিনি মিত্র নিরঞ্জন অক্ষয় ওমর।।
বিনি পাত্রে নৃপ প্রভু ত্রিজগত ঈশ্বর।
বিনি মন্ত্রী অপরূপ কর্ম মনুহর।।
বিনি স্তম্ভে তুলি দিলা গগন মণ্ডল।
বিনি লৈগ্নে রাখিয়াছে ধরণী অটল।।
আদ্য শুভ জ্ঞান প্রভু প্রতাপ কারণ।
এচিত্র বিচিত্রে প্রভু কৈল্যা ত্রিভুবন।। (২০)
হৃদয়ে জন্মিল যদি প্রেমের অক্কুর।
অন্ধকার দীপ্তি কৈল্য সৃজি প্রেম নূর।।
প্রেম বন্ধু নূর নবী হন্তে নিরঞ্জন।
সৃজিলেক এ চিত্র বিচিত্র ত্রিভুবন।
সে সকল ধর্ম কথা অপূর্ব বচন।
কিতাব বৃত্তান্ত সব আছএ লিখন।।
কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস।
সে সকল ইষ্ট মিত্র আসি মোর পাশ।।
কহিলা গৌরব ভাষে করুণা বচন।
পরিশ্রমে তুষি আক্ষি সভানের মন।। (৩০)
নূরের সৃজন কাব্য করি বঙ্গভাষা।
রচি আক্ষি সভানের পূর্ণ করি আশা।
শুনিতে ফারসী ভাষে অন্য জন মুখে।
ভালমতে বুঝিতে না পারি মন সুখে।।
তেকাজে নিবেদী বাঙ্গালা করিআ রচন।
নিজ পরিশ্রমে তোষি আক্ষি সর্বজন।।
আরবী ফারসী শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।
দেশী ভাষা বুঝিতে ললাটে পুরে তাগ।।
আরবী ফারসী হিন্দে নাই দুই মত।
যদি বা লিখএ আল্লা নবীর সিফাত।।
আরবী ফারসী শাস্ত্র কিবা হিন্দুয়ানী।
সর্ব শাস্ত্রে লিখে আল্লা নবীর কাহিনী।।
আরব্য শহরে প্রভু মোহাম্মদ স্থান।
নিযুজে আরবী বাক্য মুসাফ ফোরকান।। (৪০)
উরিয়ান শহরেত বাক্য উরিয়ান।
পাঠায় তৌরাত প্রভু মুসা নবী স্থান।।
ইউনান শহরেত ইউনান ভারতী।
নিযুজে জব্বুর প্রভু দাউদের প্রতি।।
সুরিয়ান শহরেত বাক্য সুরিয়ান।
পাঠাএ ইঞ্জিল প্রভু ইসা নবী স্থান।।
যেহি দেশে যেহি বাক্য কহে নরগণ।
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।।
সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।। (৫০)
যার যেবা নিজ বাক্য প্রভু আরাধএ।
পদুত্তর দেন্ত প্রভু আপনে লক্ষ্যএ।।
যত ইতি বাক্য হন্তে প্রভু নহে দূর।
যে যার রাজ্যে সে সে বাক্য বচন প্রভুর।।
আল্লা খোদা গোঁসাই সকল তান নাম।
সর্ব গুণে নিরঞ্জন প্রভু গুণধাম।।
হিন্দুয়ানী অক্ষরে বয়নে মুসলমানী।
লিখিআ বুঝিল তত্ত্ব পণ্ডিত বাখানি।।
অক্ষরে অধিকাধিক নাহি কদাচিত।
শাস্ত্র উপদেশ বাক্য জানিতে উচিত।। (৬০)
যদি বা শাস্ত্রে নীতি না করে পালন।
আরবী ফারসী শাস্ত্র পড়ে অকারণ।।
এহাতে পুস্তক কিবা নতুবা কিতাব।
অক্ষরে করএ ব্যক্ত গোপ্ত পরস্তাব।।
আলিফ প্রভৃতি আঞ্জি সৃজন আল্লার।
আল্লা বিনে অন্য নাহি সৃজনিয়া আর।।
আরবী ফারসী কিবা বাঙ্গালা বিশেষ।
সর্ব শাস্ত্রে লিখে আল্লা নবীর আদেশ।।
আজ্ঞা কৈল্য পূণ্য লাগি পাপের নিষেধ।। (৭০)
কোরানেতে লিখা যায় প্রভুর প্রমাণ।
আমর আদেশ মাত্র নিষেধ তাহান।।
আদেশ নিষেধ যেবা না করে পালন।
কোরান পড়িলে তার কোন প্রয়োজন।
তেকাজে অধিকাধিক নাহিক সর্বথায়।
আল্লার আদেশ মাত্র পালিতে জুয়ায়।।
তবে কি আরবী শাস্ত্র অধিক বাখানি।
রসুল সহিতে প্রভু কহিয়াছে বাণী।।
সর্ব বাক্য বুঝে প্রভু বুঝে সর্ব কথা।
প্রভু আগে ভেদাভেদ নাহিক সর্বথা।। (৮০)
মারেফাত ভেদে যার নাহিক গমন।
হিন্দু অক্ষর হিংসে সে সবের গণ।।
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না যুয়াএ।
নিজ দেশ ত্যাগি কেন বিদেশে না যায়।।
মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।
(কাব্যগ্রন্থ : নূরনামা)