মানুষ খেকো পিশাচিনী - পর্ব ৬ - ভৌতিক গল্প/গোয়েন্দা কাহিনী/রহস্য

মানুষ খেকো পিশাচিনী
মাসুদ রানা
পর্ব :


দীর্ঘক্ষণ মেয়েটার কথা শুনার পর এবার মিসির আলি সাহেব পুরো ঘটনাটা পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারলেন। তার মনে জাগা অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তরই সে সহজে খুঁজে পেলেন। সে বুঝতে পারে যে ডায়েরিটাতেই এই গবেষণা সম্পর্কে সবকিছুর ব্যাখ্যা রয়েছে! ডায়েরিটা পড়তে পারলেই হয়তো এই রহস্যের সমাধাণ করা সম্ভব হবে। এরপর মিসির আলি সাহেব সেই মেয়েটার হাতে ডায়েরিটা দিলেন। এরপরে যেই মেয়েটা ডায়েরটা পড়া শুরু করবে হঠাৎ মিসির আলি সাহেবের টর্চ লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো! সাথেসাথেই পুরো লাইব্রেরি আবার অন্ধঁকার হয়ে গেলো। মিসির আলি সাহেব বুঝতে পারলেন যে তার টর্চের ব্যাটারির চার্জ শেষ!
.
তারা বুঝতে পারলো যে এখন আর তাদের এই বাড়িতে থাকা উচিত হবে না। তারাতো এই অদ্ভুত গবেষণা এর রহস্যের ডায়েরিটা পেয়েই গেছে! এখন বাহিরে গিয়ে এটা পড়লেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না! এরপরে অন্ধঁকারের ভেতরেই মিসির আলি সাহেব এবং সেই ডাক্তার মেয়েটা ঠিক যেভাবে এই বাড়িতে ঢুকেছিলো ঠিক সেই ভাবেই জানালা দিয়ে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে আসলেন! এরপর তারা দুজনেই ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এর বাড়ির পাশের সেই নির্জন রাস্তাটা ধরে হাঁটতে থাকেন। এরই মধ্যে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো। তাই রাস্তায় কোন মানুষও ছিলো না। এছাড়াও চারিদিকে বেশ অন্ধঁকার। এই অন্ধকারে কিছুতেই ডায়েরিটা পড়া যাবে না। এরপর মিসির আলি সাহেব এবং সেই মেয়েটা দুরে একটা লেমপোস্ট দেখতে পেলো । লেমপোস্টের নিচে বেশ আলো রয়েছে। এরপর তারা সেই লেমপোস্টের আলোতে গিয়ে ডায়েরিটা পড়তে শূরু করলেন! সেই ডাক্তার মেয়েটা ডায়েরিটা পড়ছিলেন আর মিসির আলি সাহেব শুনছিলেন। ডায়েরিটা ডাক্তার ওয়াজেদ আলির নিজস্ব ভাষায় লেখা। শুরু থেকে ডায়েরিটাতে যা যা লেখাছিলো:
.
.
"
১. এটা আমার জীবনের ৩৯ নাম্বার গবেষণা। এটা আমার জীবনের একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাও বটে। এই গবেষণায় সফলতা অর্জনটা আমার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমার এবারের গবেষণার বিষয়টা হলো মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করা। এই মানুষ খেকো মানুষ তৈরির থিওরিটা আমাকে দিয়েছিলো আমেরিকার একটা বড় প্রাণী বিষয়ক গবেষক দল । তারা চাইছিলো তাদের দেশটাকে ধ্বংস করে ফেলতে। তাই তারা আমাকে অনেক টাকার অফার করে এই ভয়ংকর গবেষণাটা করার জন্য । তারা আরো বলে আমি যদি এই গবেষণায় সফল হই তাহলে তাদের দেশে তাদের সাথে আমি গবেষণার কাজ করতে পারবো। তখন আমার খ্যাতি আরো বাড়বে। আমি তাই সিদ্ধান্ত নেই যে এই মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করার মেডিসিন তৈরি করবো। যার মাধ্যমে সৃষ্ট একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে খেতেও দ্বিধা করবে না। তারা আমাকে গবেষণাটা সম্পর্কে কাউকে কিছু না জানাতে বলে। তাই এখন থেকে আমি এই মানুষ খেকো মানুষ তৈরির গবেষণা নিজের বাড়িতে একা একাই শুরু করবো।
.
২. গবেষণাটা আসলেই অনেক জটিল একটা গবেষণা! এই ধরণের গবেষণা এর আগে আমি কখনোই করিনি। তাই অনেক কষ্ট করে মানুষ খেকো মানুষ তৈরির একটি তত্ত্ব তৈরি করলাম।
আসলে মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্য রুচি ইত্যাদি অনেকটা ডি.এন.এ থেকে পাওয়া। একটা শিশুর সেই ডি.এন.এ এর সহযাত আচরণে পুরোপুরি প্রভাব পড়তে প্রায় ৯ মাস সময় লাখে যখন সে তার মায়ের গর্ভে থাকে ! তাই সেই সময়টাতে শিশু ভ্রুন অবস্হায় থাকার সময় থেকে যদি তার শরীর অন্যকোন হিংস্র প্রাণির জিনের প্রবেশ ঘটানো হয়, তাহলে হয়তো জন্মের পর থেকে সেই শিশুটি দেখতে অবিকল মানুষের মতো হলেও তার আচরণ হবে জঙ্গলের হিংস্র প্রাণিদের মতো!
.
৩. আমার তত্ত্বটি সঠিক কিনা এটা জানার জন্য গত কয়েকদিন যাবত একটা পরীক্ষা চালাচ্ছিলাম। পরীক্ষাটি শুনতে হাস্যকর হলেও এতে আমার পরীক্ষার সফলতা নিশ্চিত হয় । আমি একটা সদ্য গর্ভবতী ইদুরের শরীরে একটা টিকটিকির জিনের প্রবেশ ঘটাই। এরপর সেই ইদুঁরটিকে একটি কাঁচের জারে আটকে রাখি। এরপর যখন ইদুঁরটার বাচ্চা হলো, তখন বেশ কিছুদিন তারা স্বাভাবিক ইদুর ছানার মতোই আচরণ করলেও এরপর থেকে তারা দেয়ালে দেয়ালে টিকটিকির মতো ঘুরে ঘুরে মশা আর মাছি খেতে থাকে। তাই আমি বুঝতে পারি আমার তত্ত্বটি ভুল নয়!
.
৪.মানুষের শরীরের ভেতর কোন হিংস্র প্রাণির জিনের প্রবেশ করানো বেশ মুশকিল একটা কাজ হবে। কোন হিংস্র প্রাণির শরীর থেকে তার জিন আলাদা করাও বেশ কঠিন! তাও মানুষখেকো মানুষ তৈরির জন্য বেশ কিছু প্রাণির জিনের প্রয়োজন রয়েছে। প্রথমতো জোকের জিনের প্রয়োজন। কারণ মানুষ যদি তার শরীরে জোকের মতো সহজাত আচরণ পায় তাহলে সে খুব সহজেই অন্য একটা মানুষের চামড়ার উপর দিয়ে তার রক্ত চুষে চুষে খেতে পারবে। এছাড়াও একটা হিংস্র প্রাণির জিনকে যদি মানুষের শরীরে ভেতরে ঢুকানো হয় তাহলে মানুষ স্বভাবতই অন্য প্রাণির কাঁচা মাংস খেতে পারবে। কারণ জঙ্গলের হিংস্র প্রাণিরা কাঁচা মাংসই খেয়ে থাকে। এইভাবে দুটো জিনের মধ্যে ক্রস ঘটিয়ে সেই জিনটা যদি কোন গর্ভবতী মহিলার শরীরে প্রবেশ করানো হয় তাহলেই হয়তো মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করা সম্ভব!
.
৫. অনেকটা জটিলতার মধ্যে দিয়েই জোঁক, একটা হিংস্র প্রাণি এবং আরো কিছু সাধারণ বন্য প্রাণির জিনের মিশ্রন ঘটিয়ে নতুন এক ধরণের মেডিসিন তৈরি করলাম। এই মেডিসিনটাই ইনজকশনের মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলার শরীরে প্রতি মাসে একবার করে দিলেই হয়তো সেই গর্ভবতী মহিলার যে সন্তান হবে সে হবে হিংস্র, অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক একটা শিশু। সে সাধারণ খাবার পছন্দ করবে না। সে যখন ছোট থাকবে তখন রক্ত, ছোটখাটো প্রাণির কাঁচা মাংস ইত্যাদি খেতে বেশি পছন্দ করবে। এবং এক পর্যায়ে সে মানুষ হয়ে মানুষের মাংস খেতেও দ্বিধা করবে না!
.
৬. মেডিসিন পুরোপুরি প্রস্তুত। কিন্তু আসলেই কী এই মেডিসিনের সাহায্যে মানুষের শরীরে হিংস্র প্রাণির জিনের প্রবেশ করিয়ে মানুষ খেকো মানুষ তৈরি করা সম্ভব? এর জন্য অবশ্যই একটা নিশ্চিত পরীক্ষা করার প্রয়োজন। কিন্তু কোন গর্ভবতী মহিলা পাবো কোথায় এই গবেষণাটা করার জন্য? আর পেলেও তার শরীরেই বা এই মেডিসিন কিভাবে প্রবেশ করাবো ? আমাদের দেশে এই ধরনের পরীক্ষা নিষিদ্ধ! এটা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এরপরেই আমার বন্ধু আবির চৌধুরী আমার জন্য একটা সুখবর নিয়ে আসে। সে বলে তার স্ত্রী নাকি অন্তঃস্বত্তা। আবির আমাকে অনেক বিশ্বাস করে তাই তার এই বিশ্বাসের সুযোগটাই আমি কাজে লাগাই। তার স্ত্রীকে ভেকসিনের নাম করে প্রতিমাসে আমি তার শরীরে এই মেডিসিন প্রয়োগ করতাম। আর এইভাবেই আমার পরীক্ষাটি চালু থাকে! এরই মধ্যে এই মেডিসিনের কয়েকটা কপি আমি অ্যামেরিকার সেই গোপন গবেষক দলের কাছে পাঠিয়ে দেই। যাতে তারাও এই মেডিসিন নিয়ে পরীক্ষা করতে পারে!
.
৭. যেকোন মেডিসিন তৈরির পর তার পরীক্ষা করার আগে তার প্রতিষেধক তৈরি করাটা আবশ্যক। কারণ পরীক্ষাটির ভয়াবহতা বেড়ে গেলে তাহলে প্রতিষেধক ব্যবহার করে পরীক্ষাটি বন্ধ করা যায়। তাই আমিও এই পরীক্ষাটির প্রতিষেধক তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কোন থিওরি বা তত্ত্বই আমার মাথায় আসছিলো না!
তাই আমি গোপনে আরেক জন প্রাণি বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক ডাক্তার আসিফুর রহমান কেও এই গবেষণায় যুক্ত করি। আসিফুর প্রথমে এই গবেষণায় যোগ দিতে চায়নি। কিন্তু পরে অর্থ আর আমেরিকার গবেষকদের কাছে খ্যাতির লোভে সেও আমার সাথে এই গবেষনার কাজে সহায়তা করেন। যেহেতু আমি আগেই এই গবেষণার মেডিসিন তৈরি করে ফেলেছিলাম তাই তার একমাত্র কাজ ছিলো শুধু এই গবেষণার প্রতিশেধক তৈরি করা। তবে এই নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ডাক্তার আসিফুর রহমান আমাকে নতুন দুটি তত্ত্ব দিয়েছিলো। একটি তত্ত্ব হলো এই গবেষণায় যে শিশুটি ভিকটিম হবে সেই শিশুটি সারা জীবনের জন্য হিংস্র মানুষ অর্থাৎ মানুষ খেকো মানুষ থাকবে না।
এমন ক্ষমতা এই জিন দ্বারা তৈরি মেডিসিনে নেই! এমনকি একটা পুরো দিনও সে তার হিংস্র আচরণ প্রকাশ করবে না! দিনের অর্ধেকটা সময় সে স্বাভাবিক থাকবে বাকি অর্ধেকটা সময় সে এই মেডিসিনের প্রভাবে হিংস্র আচরণ করবে। অপর তত্ত্বটি পুরোই অন্যরকম একটি তত্ত্ব। এই ভিকটিমের শিশুটি যদি পৃথিবীতে আসার পর জোকের মতো করে কোন মানুষের শরীরের রক্ত পান করার পর তাকে খুন নাও করে তাও সেই মানুষটা বেশিদিন বাঁচবে না। খুব দ্রুতই সে মারা যাবে। কারণ এই ধরণের শিশুদের ঠোটে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ এসে জমা হবে। যা কোন মানুষের রক্ত খাওয়ার সাথে সাথে তার শরীরের ভেতর চলে যাবে এবং সেই রাসায়নিক পদার্থটা তার মস্তিস্কে গিয়ে তাকে নানান ধরণের চাপ প্রয়োগ করবে এবং এক পর্যায়ে সে বাধ্য হয়ে আত্মাহত্যা করে মারা যাবে!
.
৮. আমাদের গবেষণাটা বেশ ভালো ভাবেই চলছিলো। আমেরেকির সেই গবেষক দলও আমার বেশ প্রশংসা করছিলেন এবং তারাও বেশ কিছু গর্ভবতী মহিলাদের এ গবেষণা সম্পর্কে কিছু না জানিয়েই ভেকসিনের কথা বলে তাদের শরীরে এই মেডিসিন প্রয়োগ করে এর পরীক্ষা করছিলো! এইদিকে ডাক্তার আসিফুর রহমানের প্রতিষেধক তৈরির কাজও প্রায় শেষের দিকে।
.
৯. ডাক্তার আসিফুর রহমান আমার সাথে বেঈমানি করলো। এই গবেষণার প্রতিষেধক সে ঠিকই তৈরি করেছে কিন্তু সে আমায় সেটা দিচ্ছে না। সে চাইছে
এই প্রতিষেধকটার পুরো কৃতিত্ব নিজের নামেই নিতে। এই মেডিসিনের রোগটা যখন পুরো আমেরিকায় মহামারি আকার লাভ করবে তখন সে নাকি এই প্রতিষেধকটা সেখানে রপ্তানি করবে। এতে সে আরো অনেক অর্থ আর খ্যাতি অর্জন করতে পারবে। আর এই ভয়ংকর গবেষণাটার পুরো দোষ এসে পড়বে আমার ঘারে। আমি এই গবেষণাটা কিছুতেই এইভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। এটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত একটা গবেষণা এবং এর কৃতিত্ব শুধু মাত্র আমার। ডাক্তার আসিফুর রহমান একটা বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে এর জন্য অবশ্যই প্রস্তানো উচিত। তার আর এই পৃথিবীতে বেশিদিন বেঁচে থাকা উচিত না। আমার চাই না এই গবেষণার কোন প্রতিষেধক!"
.
.
এতটুকু কথাই লেখাছিলো এই ডায়েরিটাতে। এরপর পুরোটা ফাঁকা পৃষ্ঠা। অনেক খুঁজেও এই ডায়েরিটা থেকে এই গবেষণা সম্পর্কে আর কোন তথ্য পায় না মিসির আলি সাহেব আর ডাক্তার জেরিন আক্তার। তবে ডায়েরির শুরুর দিকে একটা গবেষণা ইন্সটিটিউটের নাম লেখা ছিলো। ডাক্তার জেরিন আক্তার বুঝতে পারলেন এটাই হয়তো সেই আমেরিকার সেই গোপন গবেষক দলের গবেষণাগাড় যারা ডাক্তার ওয়াজেদ আলিকে এই ভয়ংকর গবেষণার থিউরি টা দেয়।
.
তবে এখন মিসির আলি সাহেব এবং ডাক্তার জেরিন আক্তারের কাছে এই তথ্যটা বেশি গুরুত্বপুর্ণ না ।
তারা যেটার জন্য এতদূর ছুটে এসেছিলো, সেই প্রশ্নের উত্তরটা এখন খুঁজে পেয়েছে। এই হিংস্র মানুষের হিংস্রতা দুর করার জন্য যে একটা প্রতিশেধক রয়েছে এটা তারা জানতে পেরেছে! মিসির আলি সাহেবও এবার শম্মীর এই অস্বাভাবিক ব্যবহারের পুরো রহস্যটা বুঝতে পারেন এবং সমাধাণের পথটাও দেখতে পারছিলেন। ডায়েরি পড়ে স্পষ্ট বোঝা যায় যে এই রোগের প্রতিষেধকটা ডাক্তার আসিফুর রহমানই তৈরি করেছিলেন। যদিও এরপর সেই প্রতিষেধকটা লুকিয়ে রাখেন। কাউকে দেখান না! এই কয় বছরে তাদের এই গবেষণা সম্পর্কে কেউই কিছু জানতে পারে নি। তাই এর প্রতিষেধকও কেউ খুঁজেনি। হয়তো ডাক্তার আসিফুর রহমান এর গবেষণা গাড়ে গিয়ে ভালোমতো খুঁজলেই সেই প্রতিষেধকটা পাওয়া যেতে পারে!!
.
এরপর মিসির আলি সাহেব এবং ডাক্তার জেরিন আক্তার দুজনে মিলেই ডাক্তার আসিফুর রহমানের গবেষণাগাড়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে প্রায় পুরো গবেষণাগাড়টাই তার খুঁজলো। কিন্তু কোথাও এইরকম হিংস্র মানুষ নিয়ে গবেষণার প্রতিষেধক তারা খুঁজে পায় না। এরমধ্যে মিসির আলি সাহেব এবং সেই ডাক্তার মেয়েটা, ডাক্তার আসিফুর রহমানের এই গবেষণার সময়ের বেশ কয়েকটা ডায়েরি পড়ে ফেলেন। কিন্তু কোন ডায়েরিতেই এই গবেষণার প্রতিষেধক তৈরির প্রসঙ্গে ডাক্তার আসিফুর রহমান কিছুই লিখেন নি! তারা দুজনেই বেশ চিন্তায়
পড়ে যান। এরপর মিসির আলি সাহেব ভাবেন, যেহেতু এই প্রতিষেধকটা ডাক্তার আসিফুর রহমানের জন্য একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছিলো! তাই হয়তো সে ভেবেছিলো প্রতিষেধকটা এই গবেষণাগাড়ে রাখলে,যে কেউ চুরি করে নিয়ে যেতে পারে! তাই হয়তো এই প্রতিষেধকটা ডাক্তার আসিফুর রহমান কোন গোপন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলো। এরপর মিসির আলি সাহেব ডাক্তার আসিফুর রহমানের বেডরুমে যান। তার গবেষণা গাড় থেকে বেশ কিছুটা দূরেই তার বেডরুম। বেডরুমটা অনেকদিন ধরেই পরিত্যাক্ত অবস্হায় পড়েছিলো। ডাক্তার আসিফুর রহমানের মৃত্যুর পর তার মেয়ে বর্তমান ডাক্তার জেরিন আক্তারও খুব একটা তার ঘরে যায় না। এরপর তারা পুরো ঘর ভালো করে খুঁজতে থাকে সেই প্রতিষেধকটার জন্য। কিন্তু এখানেও তারা এই প্রতিষেধকটা খুঁজে পায় না! এরপর অনেকটা হতাশ হয়েই মিসির আলি সাহেব খাটে বসে পড়েন। হঠাৎ তার পা গিয়ে লাগে খাটের নিচের একটা ষ্টিলের বাক্সে! এরপর খাটের নিচ থেকে বাক্সটা নিতেই মিসির আলি সাহেব দেখলেন বাক্সটাতে তালা দেওয়া। এখন তাদের পক্ষে এই তালার চাবি খোঁজা প্রায় অসম্ভব ! তাই আর কোন উপায় না দেখে তার ট্রাংকের তালাটা ভেঙে ফেলেন। এরপর তারা তাঁদের বহু আকাঙ্খিত সেই প্রতিষেধকটা দেখতে পেলেন। প্রতিষেধকটা একটা কাঁচের শিশিতে সংরক্ষণ করা ছিলো।
শিশি টার উপরের লেভেলেই লেখা ছিলো যে এটা কিসের প্রতিষেধক । কাঁচের শিশিটার পাশেই একটা ডায়েরি রাখা ছিলো। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে ডাক্তার জেরিন আক্তার বুঝতে পারলেন যে, এই ডায়েরিতেই তার বাবা এইরকম হিংস্র মানুষ খেকো মানুষের জন্য প্রতিষেধক তৈরির ফর্মুলা লিখে রেখে গিয়ে ছিলেন। এই ফর্মুলার সাহায্যে এখন ডাক্তার জেরিন আক্তার নিজেও নতুন করে এই রোগের প্রতিষেধক তৈরি করতে পারবেন। হয়তো এই ফর্মুলার কপি আমেরিকার সেই ইমেইল পাঠানো গবেষকদের কাছে পাঠালে তারা নিজেরাই প্রতিষেধক তৈরি করে তাদের দেশের এই সমস্যাটার সমাধান করতে পারবেন!
.
কিন্তু এখন এই প্রতিষেধক যতটুকু তৈরি করেছিলেন ডাক্তার আসিফুর রহমান সেটুকুই ইনজেকশনের মাধ্যমে শম্মীর শরীরে প্রবেশ করিয়ে আগে তাঁকে সুস্হ্য করতে হবে!
.
এরপরে দ্রুতই মিসির আলি সাহেব এবং ডাক্তার জেরিন আক্তার আবির সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লেন। ডাক্তার ওয়াজেদ আলি এর গবেষণার মেডিসিনের পরীক্ষাটিতো সফল হয়েছিলোই। এইবার দেখার পালা ডাক্তার আসিফুর রহমানের গবেষণার প্রতিষেধক তৈরির পরীক্ষাটি সফল হয় কি না ?
.
তারা যতক্ষণে আবির সাহেবের বাড়িতে পৌছালেন ততক্ষণে শম্মীয়র ৩ নাম্বার খুনটা করা হয়ে গিয়েছিলো। শম্মী আজ আরেকটা শিশুকে খুন করেছে! কিন্তু মিসির আলি সাহেবের বিশ্বাস ছিলো, এটাই হয়তো শম্মীর শেষ হিংস্র খুন ছিলো! এরপর থেকে মেয়েটা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শুধু দিনের অর্ধেকটা সময় না, সারাটা জীবনের জন্যই হয়তো এখন মেয়েটা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
.
এরপর আবির সাহেবকে মিসির আলি সাহেব পুরো ঘটনাটা খুলে বলেন। আবির সাহেব বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তার বন্ধু তার সাথে এমন কাজ করতে পারে?!!
.
এরপর ডাক্তার জেরিন আক্তারকে আবির সাহেব শম্মীর ঘরে নিয়ে যান। শম্মী তখন ঘুমাচ্ছিলো। এরপর ডাক্তার জেরিন আক্তার সেই প্রতিষেধকের শিশি থেকে বেশ কিছুটা প্রতিষেধক ইনজেকশনে ভরে সেটা শম্মীর শরীরে প্রবেশ করান। শম্মী ঘুমের ভেতর শুধু একটু নড়ে উঠলো! এর বেশি কোন প্রতিক্রিয়াই করলো না।
.
.
এরপর আবির সাহেব, ডাক্তার জেরিন আক্তার এবং মিসির আলি সাহেব নতুন একটা দিনের অপেক্ষায় রইলেন। তারা এটাই জানতে চায় যে, শম্মী সুস্হ্য হয়েছে কি না?
.
এরপর সকাল হতেই শম্মী আবার স্বাভাবিক ব্যবহার করা শুরু করে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যাঁ হয়ে যায়। তাও শম্মীর ভেতরে আর কোন অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায় না। এরপর টানা ৭ দিন কেটে গেলো। শম্মী এখন পুরোপুরি সুস্হ্য। সে এখন বাকি ৮-১০ টা মেয়ের মতই স্বাভাবিক আচরণ করে। তার ভেতর আর কখনো হিংস্রতা জেগে উঠেনি। এই ব্যাপারটা নিয়ে আবির সাহেব মিসির আলি সাহেবের প্রতি চিরো কৃতজ্ঞ হয়ে রইলেন।
.
এইদিকে ডাক্তার জেরিন আক্তারও সেই প্রতিশেধকের ফর্মুলার এক কপি সেই গবেষণা সংস্হাকে ইমেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো যারা তাকে কয়েক দিন আগে ইমেইল করেছিলো! তারা সেই
ফর্মুলায় প্রতিষেধক তৈরি করে আমেরিকান সেই হিংস্র শিশুদের উপর প্রয়োগ করে এবং সেই শিশু গুলোও আবার সেই হিংস্রতা ভরা অভিশপ্ত জীবন থেকে চিরোমুক্তি পেয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। এরপর জেরিন আক্তার সেই ভয়ংকর থিওরি যেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ডাক্তার ওয়াজেদ আলিকে দিয়েছিলো সেই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামও সেই আমেরিকান গবেষকদের কাছে প্রকাশ করে দেয়। এরপর সেখানে তাঁদের এই ভয়ংকর গবেষণার জন্য তাঁদের কঠোর ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়! আর এই ফর্মুলাটার জন্য সাথে সাথেই ডাক্তার জেরিন আক্তারের নাম এবং খ্যাতি হয়ে যায় পুরো বিশ্বে।
খ্যাতি পছন্দ করেন না। তাই তিনি আড়ালেই রয়ে গেলেন। তিনি রহস্য পিপাসু। শম্মীর এই অদ্ভুত হিংস্র আচরণের রহস্যটা তিনি ভেদ করতে পেরেছেন, এটা ভেবেই তিনি বেশ স্বস্তি পাচ্ছেন! রহস্যের পেছনে ছুটাটা মিসির আলি সাহেবের একটা বড় নেশা। তাই তিনি এখন পরবর্তী রহস্যে ঘেরা একটা কেসের অপেক্ষায়!
.
* * * * * সমাপ্ত * * * * *

(প্রিয় পাঠক পুরো গল্পটি পড়ে কেমন হয়েছে অনুগ্রহ করে জানাবেন।)

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.