জ্বীন প্রতিবেশী - পর্ব ২ - ভৌতিক গল্প

জ্বীন প্রতিবেশী
লেখা: সুমাইয়া জান্নাতি
পর্ব ০২

অনিলার মনে হচ্ছে সে খুব সুন্দর একটা জায়গায় চলে এসেছে।চারপাশে খুব মিষ্টি ঘ্রাণ।আর দূর থেকে কেমন যেন একটা অপার্থিব সুর ভেসে আসছে। অনিলার খুব ভালো লাগছে।সে দেখতে পেলো দূর থেকে দুজন মানুষ হেটে তার কাছে আসছে।অনিলা তাদের মুখ দেখতে পারছেনা।তারা খুব কাছে চলে এসেছে। মানুষ দুটো খুব লম্বা।তারা অনিলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাকছে।যেন তাকে তাদের সাথে যেতে আহবান জানাচ্ছে তারা।অনিলা হাত বাড়ায় তাদের দিকে।কিন্তু ঠিক তখনি সে পেছন থেকে তার মায়ের ডাক শুনে।ওই মানুষ গুলোর হাত অনিলা আর ধরতে পারেনা।
-- "অনিলা,অনিলা। এই অবেলায় ঘুমাচ্ছিস কেনো।ওঠ।সেই কখন থেকে ডাকছি।" অনিলার মা লাবনি ইসলাম অফিস থেকে ফিরেছেন।তার কাছে বাসার ডুপ্লিকেট চাবি থাকে সবসময়।অনিলা চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকায়। �- কখন এলে অফিস থেকে মা?অনিলা শোয়া থেকে উঠে বসে। �- এই তো দশ মিনিট হলো এসেছি।কি স্বপ্ন দেখছিলি?হাসি হাসি মুখ করে ঘুমাচ্ছিলি।�-" কি দেখছিলাম মনে আসছেনা।ফ্রেস হয়ে নিচ্ছি।একটু চা দিয়োতো মা।�অনিলা উঠে ওয়াশরুমের দিকে যায়।বেসিনের কল ছেড়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে সে।মা কে মিথ্যা বলেছে সে।তার স্পষ্ট মনে আছে সে কি স্বপ্ন দেখছিলো।এখনো তার কানে ঐ সুর টা বাজছে।মুখে পানির ঝাপ্টা দেয় সে।মানুষ দুটোর মুখ দেখতে পারলে ভালো হতো।
কড়া দুধচায়ের সাথে ড্রাই কেক ভিজিয়ে খাওয়া অনিলার খুব প্রিয়। একবসায় সে গুনে গুনে দশ পিছ ড্রাই কেক খেয়ে ফেলে।মগ ভর্তি চা তখন ড্রাই কেকের গুরো দিয়ে গিজ গিজ করে।�-"ভাবছি অফিস থেকে কয় দিন ছুটি নিবো।" গ্রিন টি তে চুমুক দিতে দিতে বলল লাবনি ইসলাম।দুধ চা খেতে পারেন না তিনি।গ্যাসটিকের কারনে ডাক্তার বারন করেছেন।যদি ও তিনি আগে থেকে রং চাই খেতেন। আদা কুচি আর এলাচ দিয়ে।�- কেন মা? হঠাৎ ছুটি নিবে কেন? ড্রাই কেক নরম হয়ে অর্ধেক ডুবে গেছে চায়ের ভেতর। সেটার জন্য মনে মনে আফসোস করতে করতে মায়ের দিকে তাকালো অনিলা।�- "এই যে,তুই সারাদিন একা থাকিস,কথা বলারো কেও নাই এখানে।কয়দিন ছুটি নিয়ে মা মেয়ে কথাও ঘুরে আসবো।কি বলিস?"�অনিলা মাকে বলতে যায় যে,তিন তলায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। আজকে গিয়েছিলো সে।বলার জন্য যেই মুখ খুললো সে,তখনি ড্রাই কেকের টুকরা গলায় আটকে যায়। কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে পানি চলে অাসে অনিলার।মা কে আর বলা হয়না সুন্দরী প্রতিবেশীর কথা।আজকের মতো সাড়ে সাত পিছ ড্রাই কেক খেয়েই উঠে যায় সে।
অনিলা একটা গল্পের বই নিয়ে বারান্দায় যেয়ে বসে।বই টার কভার টা সুন্দর। একটা মেয়ের ছবি দেয়া।মেয়েটা পেছনে ঘুরে আছে, সাদা একটা জামা পরা।তার চুল কোমর ছাড়িয়ে পা ছুই ছুই করছে।মেয়েটার হাতে ফুলের ঝুরি।অনিলার বইয়ের মেয়েটিকে দেখে মনে হলো মেয়েটি কে যেন সে বাস্তবে দেখেছে।তার মনে পরলো বইয়ের মেয়েটা দেখতে তার নতুন প্রতিবেশীনির মতো।অনিলা মনে মনে হাসে।আফসানা মেয়েটা খুব সুন্দর করে কথা বলে।তার সাথে ভালোই বন্ধুত্ব জমবে অনিলার।�--কিরে মা,কিছু খাবিনা?লাবনি ইসলাম বারান্দার দরজায় এসে দাঁড়ায়।�--না মা,ইচ্ছে করছেনা খেতে।তুমি খেয়ে নাও।বাবার সাথে কথা হয়েছে?অনিলা হাতের বই বন্ধ করতে করতে বলে।�--না,এখনো কথা হয়নি।ভাবলাম একেবারে ঘুমানোর টাইমে দিবো কল। লাবনি ইসলাম মেয়ের পাশের চেয়ারটা টেনে বসলেন।খুব সুন্দর বাতাস হচ্ছে বাহিরে।প্রতিদিন এই সময়টা মেয়ের সাথে একান্তে কাটাতে ভালবাসেন তিনি।�-- কি বই এটা,কাহিনী কি নিয়ে?মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন লাবনি।�-- "একটা মেয়েকে নিয়ে।যাকে জন্মের পর চুরি করে আরেক মহিলাকে দিয়ে দেয়া হয়।ভালো লাগছে গল্পটা।তুমি পড়বে মা"?অনিলা মায়ের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকায়।অনিলার গল্পের প্লট টা শুনে লাবনি ইস্লামের মুখ সাদা হয়ে যায়।তিনি সেকেন্ডের মধ্যে বইটা কেড়ে নেন অনিলার হাত থেকে।�-- কি সব বই পড়িস তুই?কোন কাহিনী হলো এটা?লাবনি শক্ত করে বই টা ধরে রাখে।আমাকে দে,আমি পড়তে পড়তে ঘুমাবো। �অনিলা অবাক হয়ে যায়।�--"মা,আমার পড়া শেষ হয়নিতো এখনো।শেষ হলে তুমি নিয়ো।�-- "না,তোর পড়া লাগবেনা এই বই।তুই এখন ঘুমাতে যা। "লাবনি ইসলাম বই টা নিয়ে রুমে চলে গেলেন।অনিলার মন টা খারাপ হয়ে যায়।মাঝে মাঝে মা অদ্ভুত আচরণ করে অনিলার সাথে।�যেমন লাবনি ইসলাম যেন কখনোই চান না যে অনিলা অন্য মানুষের সাথে বেশি মিশুক।খুব বেশি সাজগোজ করুক,চুল ছেড়ে বাহিরে যাক আরো অনেক কিছু।অনিলার মাঝে মাঝে খুব অভিমান হয় মায়ের এসব ব্যপারে। আবার নিজেই ভাবে যে,সেএখন বড় হচ্ছে, তাই হয়তো সাধারন সব মায়ের মতই তার মাও তাকে চোখে চোখে রাখছে।অনিলা এসব ভেবে নিজেকে শান্তনা দেয়।কিন্তু সে এটাও বুঝে মায়ের এমন ব্যাপার গুলি অনিলার শৈশবেও ছিলো।অনিলার সব ব্যাপারেই লাবনি ইসলাম ওভার প্রটেক্টিভ ছিলেন এবং আছেন।কিন্তু তারপরেও মাকে খুব ভালোবাসে সে।
অনিলা আরো কিছুক্ষন বারান্দায় বসে থাকে।চেয়ারে হেলান দিয়ে বারান্দার সিলিংএর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে।আফসানাদের বাসার ঝার বাতিটার কথা মনে পরে অনিলার।কিযে সুন্দর দেখতে সেটা।অাফসানাদের ফার্নিচার গুলিও কি দারুন!�হঠাৎ অনিলার মনে হল এতো ভারী ভারী জিনিসপত্র তিন তলায় উঠালো কখন অাফসানারা।কোনো শব্দই তো পায়নি সে!আফসানারাতো তাদের ঠিক উপরের ফ্লাটেই উঠেছে।�অনিলার মনে আছে,তাদের আগের বাসার উপরের ফ্লাটে নতুন কেও উঠলে তাদের ফার্নিচার টানাটানির শব্দে খুব বিরক্ত হতো সে।আর এখানে সে টের ই পেলোনা কিছু।ভালোই হয়েছে।জিনিসপ্ত্রের টানাটানির শব্দে মাথা ধরে যায় তার।এটার জন্য আফসানা কে একটা ধন্যবাদ দিতে হবে।মনে মনে ভাবে অনিলা।ঘুমাতে চলে যায় সে নিজের ঘরে।
-- "অনিলা,উঠে পর।আমি অফিসে যাচ্ছি।খাবার রেডি করে রেখেছি ডাইনিংএ।খেয়ে নিবি কিন্তু।রাতেও খাসনি।মায়ের ডাকে ঘুম ভেংগে যায় অনিলার।ভালোই রোদ উঠেছে আজকে।ঘর আলোয় ভরে গেছে।�-- ঠিক আছে খেয়ে নিবো। তুমি নাস্তা করেছো মা?
অনিলা চুল পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকাতে আটকাতে মায়ের দিকে তাকায়।লাবনি আজকে নীল রঙের সুতির শাড়ি পরেছেন।তার শ্যামলা রঙের সাথে শাড়িটা মানিয়েছে বেশ।অনিলা মাকে বলতে যায় যে আজ তাকে খুব মিস্টি লাগছে,তখনি সে খেয়াল করে মায়ের অফিসের ব্যাগে কাল রাতের বই টা।মা অফিসে নিয়ে যাচ্ছে সেটা। অনিলার মনটা খারাপ হয়ে যায়।ভেবেছিলো অাজ সারাদিনে বইটা পড়ে শেষ করবে। সেটা অার হলোনা।লাবনি ইসলাম বেরিয়ে যায়।মায়ের প্রশংসা করা হয়না অার অনিলার।
দুপুর বারোটা বাজছে ঠিক।অনিলা টিভি অন করে অন্য দিকে ফিরে বসে আছে।কিছুই করার নেই।�সে ভাবলো একটু ছাদে গিয়ে হেটে আসা যাক।অনিলা দরজা লক করে বাহিরের জুতা পায়ে দিতে লাগলো ছাদে যাওয়ার জন্য। পেছন ফিরে দেখে কেয়ারটেকার চাচা সিড়ি দিয়ে নামছে।অনিলা একবার ভাবে যে সালাম দিবে।কিন্তু অনিলাকে অবাক করে দিয়ে কেয়ারটেকারই অনিলাকে সালাম দেয়।অনিলার দু সপ্তাহ আগের কথা মনে পরে যায়।সে কোনমতে সালামের উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে যায় কেয়ারটেয়াকার চাচার।তার সাথে চোখাচোখি হওয়ার ইচ্ছা আপাতত নেই অনিলার।�তিন তলা পার হয়ে ছাদের সিড়িতে পা দেয়ার সময় অনিলা দেখে আজকেও আফসানাদের দরজা খোলা,চাপিয়ে দেয়া।অনিলা ভাবে হয়তো কেও বের হয়েছে,অাটকায়নি পরে কেউ।সে আফসানাদের দরজার দিকে আর না দেখে ছাদের সিড়িতে পা দেয়।কিন্তু অনিলা আর পা বাড়াতে পারেনা।তার মন যেন চাচ্ছে সে আফসানাদের বাসায় যাক।নিজের উপর রাগ হয় অনিলা।সে যাবেনা আজকে।কারো বাসায় কি প্রতিদিন যাওয়া যায়?তাও এই ভর দুপুরে?অনিলা নিজের সাথে যুদ্ধ করে।কিন্তু সে কোন ভাবেই ছাদের দিকে যেতে পারেনা।তার মনে কি যেন তাকে টানছে তিন তলার ফ্লাটের দিকে!�অনিলা আফসানাদের দরজায় নক করতেই দেখে আফসানা দাড়িয়ে আছে।যেন অনিলার অপেক্ষাতেই ছিলো সে!�-- আসসালামু আলাইকুম।আফসানা হাসিমুখে সালাম দেয় অনিলাকে।কেমন আছেন?�--ওয়ালাইকুম আস্সালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো অাছি।সালামের জবাব দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে অনিলা।যদিও আফসানা তাকে ভেতরে যেতে বলেনি,ব্যাপারটা খেয়াল করতে লজ্জায় পরে যায় সে।�--আমি জানতাম আপনি আসবেন।তাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।আফসানা অনিলাকে বলল। অনিলা সোফায় বসতে বসতে খেয়াল করলো আফসানাদের বাসায় খুব কম আলো।বুঝার উপায় নেই যে এখন দুপুর আর বাহিরে এতো রোদ।ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছেনা অনিলা।সে তাদের জানালার পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে।�-- "আজকে বাহিরে খুব রোদ।আমাদের এতো অালো ভালোলাগেনা।তাই ভাইয়া অনেক দূর থেকে এই কাপড় গুলি আনিয়েছেন, যেনো ঘরে আলো না আসে।" অাফসানার কথা শুনে অনিলা অবাক হয়ে বলে�-- "আপনাদের বুঝি আলো ভালো লাগেনা?আমারতো ঝলমলে রোদ খুবই পছন্দ।"অনিলা কথাটা বলে আফসানার দিকে সরাসরি তাকায়। �আফসানার হাসিমুখ টা যেনো হঠাৎ শক্ত হয়ে গেলো। অনিলা ব্যাপারটা খেয়াল করে।�-- "সব সময় অবশ্য আবার এতো রোদ আমারও ভালো লাগেনা।ইদানিং যা গরম পরে।" অনিলা কথা ঘুরানোর চেস্টা করে।অাপনার বাসায় কে কে অাছেন?কাওকে দেখছিনা যে?�--"এখানে আমি,আমার বড় ভাই আর আমার দূর সম্পক্রের এক চাচা থাকেন।" আবার হাসি ফিরে আসে আফসানার মুখে।অনিলা স্বস্থি পায়।
অনিলার নাকে খুব সুন্দর একটা ঘ্রান অাসছে।মনে হচ্ছে আগেও যেন ঘ্রান টা সে পেয়েছিলো।কিন্তু কোথায়,সে মনে করার চেস্টা করে।�অনিলা দেখে টেবিলের উপরে গতকালের মিস্টি গুলো সেই পিতলের বাটিতে রাখা।অনিলা সেদিকে তাকিয়ে বলল "আপনার বাবা, মা?,উনারা এখানে থাকেন না?�"নাহ।আব্বু,আম্মি অনেক দূরে থাকেন।" কথাটা বলার সময় কন্ঠ সর কিছুটা নামিয়ে নেয় অাফসানা।�মিস্টি গুলি খুব খেতে ইচ্ছে করছে অনিলার।ব্যাপারটা এমন না যে অনিলার মিস্টি খেতে খুব ভাললাগে।কিন্তু এই মিস্টি গুলির ব্যাপারই আলাদা।সে মনে মনে ভাবে আফসানাকে জিজ্ঞেস করবে কোথাথেকে কিনেছে মিস্টি গুলি।অনিলা মনের অজান্তেই পিতলের বাটি থেকে একটা মিস্টি তুলে নেয়।মিস্টি টা হাত থেকে মুখ পর্যন্ত আনার সাথে সাথে�অনিলা অপ্রস্তুত হয়ে যায়।কি হচ্ছে এসব তার সাথে!!সে কখনো তার মায়ের জিনিসো না বলে ধরেনা। আর আজকে সে কি করছে এসব!!�-- প্লিজ খান না।আপনার জন্যই এনে রেখেছি মিস্টি গুলি।অাফসানা অনিলাকে মিস্টি খেতে অনুরোধ করে।অনিলা মিস্টিটা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে মুখে দেয়।কি স্বাদ এই জিনিসে।কথায় পেলো এই খাবার ওরা!!�-- আপনার এই মিস্টি খুব ভালো লাগছে,না?আফসানা মুচকি হাসি ধরেই রেখেছে ঠোটের কোনে।�-- হুম,খুবই মজা খেতে।কোথা থেকে আনিয়েছেন এগুলি?অনিলা জিগ্যেস করে।�--"এগুলি অনেক দূর থেকে এসেছে।আপনি চিনবেন না"আফসানা কেমন রহস্য করে বলল কথাটা।�-- "না না,চিনবো আমি।বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে ভালো আইডিয়া আছে আমার।" অনিলা মজা করে বল্ল কথাটা।অনিলা ভেবেছিলো তার কথা শুনে হাসবে আফসানা।কিন্তু আফসানা হাসলোনা।সে তার কন্ঠসর আরো নামিয়ে বলল "এটা এখানকার মানচিত্রের বাহিরের অনেক দূর দেশ থেকে এসেছে।" সেই জায়গাটা অনেক দূরে। �-- ওহ।তাই নাকি।যেখান থেকেই আসুক,খেতে কিন্তু দারুন।আপনিও নিন না একটা আমার সাথে।"
অনিলা একটা মিস্টি এগিয়ে দেই আফসানার দিকে মিস্টিটা হাতে নেয়ার সময় অনিলার হাতের সাথে আফসানার হাতের ছোয়া লাগে।অনিলা চমকে যায়!এতো ঠান্ডা হাত আর এতো নরম!আফসানা ঝাটকা দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়।অনিলা উঠে দাঁড়ায়।�--আজকে আসি তাহলে। অনিলা ভাবে যে আফসানা কে তাদের বাসায় যেতে বলবে।কিন্তু তার আগেই আফসানা আল্লাহ হাফেয বলে তাড়াতাড়ি ভেতরের ঘরে চলে যায়।অনিলা কে ঠিক মত বিদায়ও যানায়নি সে।অনিলাও সাথে সাথে বাসায় চলে যায়।
লাবনি ইসলাম দুদিন ধরে বাসায় আছেন।পর পর দুদিন সরকারি ছুটি পেয়েছেন তিনি।ভেবেছিলেন এই দুদিন মেয়েকে নিয়ে তার খালাতো বোনের বাসায় বেরিয়ে আসবেন।কিন্তু দুদিন ধরে অনিলার জ্বর শরীরে।হঠাৎ জ্বর কেনো আসলো বুঝতে পারছেন না তিনি।এখনতো সিজন ও বদলাচ্ছেনা।তিনি মেয়ের মাথায় জ্লপট্টি দিচ্ছেন বার বার।�--কিরে মা,একটু ভালো লাগছে এখন?লাবনি ইসলাম মেয়েকে আদর মাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন।�-- হ্যা মা।আগের থেকে একটু বেটার লাগছে। �-- এখন তাহলে একটু কস্ট করে চল ডক্টর এর কাছে যাই।হঠাৎ জর কেন অাসলো!�--মা,তুমি এতো টেনশন করো নাতো প্লিজ।সামান্য জ্বর।নাপা খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।তুমি বরং আমার জন্য ঝাল ঝাল কিছু বানিয়ে দাও মা।ঝাল কিছু খেতে ইচ্ছা করছে।"�লাবনি ইসলাম রান্না ঘরের দিকে গেলেন। অনিলাও ভাবছে হঠাৎ করে জ্বর অাসলো কেনো!�সেদিন আফসানাদের বাসা থেকে আসার পর ই তার জ্বর চলে আসে।অনিলার মনে আছে, আফসানার হাতের কথা। এতো ঠান্ডা ছিলো কেনো ওর হাত!আর এতো নরম!মানুষের শরীর কি এতো নরম হয়!�কিছুহ্মন পর লাবনি ইসলাম মেয়ের জন্য ঝাল ঝাল করে মাংস আর সব্জি দিয়ে নুডুলস করে নিয়ে আসেন।অনিলা বালিশে হেলান দিয়ে নুডুলস খেতে থাকে।
রাতে ঘুমের মাঝে অনিলা সেই আগের সপ্নটা দেখে। সেই মন ভোলানো সুর,খুব মিস্টি একটা ঘ্রান।আর দূরে দাড়ানো দুজন লম্বা মানুষ। তাদের মুখ দেখতে পাচ্ছেনা অনিলা।কিন্তু সে বুঝতে পারছে এদের একজন পুরুষ, আরেকজন নারী!তারা হাত বাড়িয়ে ডাকছে অনিলাকে। �অনিলার ঘুম ভেংগে যায়।নাকে মিস্টি গন্ধ টা লেগে আছে।অনিলার মনে হচ্ছে ঘ্রান টা সে আগেও পেয়েছে।কিন্তু কথায়? হঠাৎ অনিলার মনে পরে যায়।সেতো এই ঘ্রান আফসানাদের বাসায় পেয়েছিলো!অনিলার শরীর ঘামতে থাকে।তার জ্বর ছেড়ে দিয়েছে।পাশ ফিরে দেখে লাবনি ইসলাম পাশেই ঘুমুচ্ছেন।মেয়েরজ্বর দেখে আজকে মেয়ের সাথেই ঘুমিয়েছেন তিনি।
সকালে অনিলা ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মা পাশে বসে আছে।অনিলা মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়।�-- শরীর এখন কেমন মা,?দেখলাম গায়ে জ্বর নেই।�-- আলহামদুলিল্লাহ। এখন একদম ফ্রেস লাগছে মা।মনেই হচ্ছেনা দুদিন বিছানায় পরে ছিলাম জ্বর নিয়ে।তুমি অফিসে যাবে কখন মা?�--ভেবেছিলাম যাবনা আজকে।মেয়েকে জ্বরের মধ্যে রেখে কি মায়ের কাজে মন বসবে বল?�অনিলা মাকে জড়িয়ে ধরে। "আমার জ্বর সেরে গেছে মা।তুমি নিশ্চিন্তে অফিস কর এখন।নাহলে তোমার বদরাগী বস্ আবার রাগ দেখাবেন তোমার সাথে।তুমি আমাকে নিয়ে একদম ভেবোনা মা"।�লাবনি ইসলাম মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বল্লেন," ঠিকাছে মা,আমি যাচ্ছি তাহলে।নাস্তা,দুপুরের খাবার সব রেডি করে রেখেছি। খেয়েনিস কিন্তু।" লাবনি ইসলাম অফিসে চলে যায়।�অনিলা বেড থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে নেয়।চুল গুলি এলোমেলো হয়ে একাকার হয়ে অাছে।হেয়ার ব্রাশ টা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়।নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে অনিলা।ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ রূপবতী সে।যেমন তার গায়ের রং,তেমন চেহারা।হাইট ও তার অনেক ভালো।বাম গালের মাঝ বরাবর কালো তিলটি যেনো সোনায় সোহাগা।নিজেকে দেখে নিজেই মুগ্ধ অনিলা।ক্লাসে বান্ধুবীদের মধ্য মনি ছিলো সে।অনিলার বান্ধুবীরা তাকে পরী বলে ডাকতো।কিন্তু অনিলার মা খুব রেগে যেতেন,যদি অনিলার কোন ফ্রেন্ড তার সামনে অনিলাকে পরী বলে ডাকতো।মা কেন রেগে যেতো অনিলার সেটা আজো অজানা!!

(চলবে)

© bnbooks.blogspot.com

Bnbooks is one of the largest archieve storage of pdf books, Bengali story, Bangla Kobita, Lyrics and all Kinds of Literature. Tags: Free Bangla pdf books download, Bangla Kobita, Technology News, Song Lyrics.